Ticker

6/recent/ticker-posts

আল্লাহ তুই দেহিছ’


কয়েক মাস আগে চট্টগ্রামের একটি ভিডিও দেখেছিলাম। রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো মানসিক ভারসাম্যহীন লোকদের চুল, দাড়ি-গোঁফ কেটে, গোসল করিয়ে তাকে নতুন কাপড় পরিয়ে দিচ্ছে, খাবার খাইয়ে দিচ্ছে। দৃশ্যটি ভালো লেগেছিল। কাজটি মানবিক এবং অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। 

কিন্তু গত দু-দিন ধরে ফেসবুকে ঘুরে বেড়ানো এই ভিডিওটি মোটেও ভালো লাগেনি। জোর করে যার চুল, জটা কাটা হচ্ছে তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে মনে হচ্ছে না বরং বাউল/ফকির বা ভবঘুরে মনে হচ্ছে। 

আমাদের দেশে এরকম এক শ্রেণির লোক আছে যারা বিভিন্ন মাজার-খানকার অনুসারী। এরা এরকম বাউল/ফকিরের বেশ ধরে ঘুরে বেড়ায়। তাদের কেউ কেউ চেয়ে/ভিক্ষা করে কিংবা তাবিজ-কবজ, ঝাড়-ফুক করে জীবিকানির্বাহ করে। অর্থাৎ এরা মানসিক ভারসাম্যহীন নয় বরং ইচ্ছাকৃতভাবেই তারা এই বেশ-ভূষা ধারণ করেছে।

তাদের এই বেশ-ভূষা বা পেশাকে সমর্থন করছি না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে তাদেরকে জোর করে এই পেশা- সাজসজ্জা থেকে বের করে আনতে হবে! জোর করে তাদের পোশাক পরিবর্তন করতে হবে! চুল, দাড়ি কামিয়ে দিতে হবে! এমনটা করলে তা অবশ্যই অমানবিক হবে।

আপনার যদি মনে হয় তাদের এই পেশা, এই পোশাক, এই সাজসজ্জা অশোভন এবং অধর্মীয় আচরণ! তাহলে আপনি তাদের সাথে কথা বলুন, তাদেরকে বোঝান। সত্য ও সুন্দরের জীবনের বার্তা দিয়ে সঠিক পথে আনুন। তা না করে জোর করে তাদের সাথে এরকম আচরণ একেবারেই কাম্য নয়।

যারা এই ধরনের কাজ করেন বা সমর্থন করেন তারা কি ভবিষ্যতে জোর করে দেশের অমুসলিমদের কালেমা শেখাবেন/ তাদের মুসলিম বানাবেন? 

তারা কি জোর করে ওহাবিকে সুন্নি, সুন্নি কেউ ওহাবি বানাবেন? 

তারা কি শিয়াকে সুন্নি আর সুন্নি কে শিয়া বানাবেন? 

তারা কি জোর করে নিজের রাজনৈতিক দলের আদর্শ অন্যকে মানতে বাধ্য করবেন?

তারা কি জোর করে শার্ট, প্যান্ট পরিধানকারীকে টুপি-পাঞ্জাবি পড়াবেন? 

তারা কি শাড়ি-সালোয়ার কামিজ পড়া নারীদেরকে জোর করে বোরকা, হিজাব পরাবেন? 

তারা কি জোর করে কারো মুসলমানি করাবেন?

রাস্তা-পার্কে তরুণ-তরুণীদের হাঁটতে দেখলে, কথা বলতে দেখলে জোর করে তাদের বিয়ে পড়িয়ে দিবেন?

নিজের বিবেক বুদ্ধি দিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করুন- কোনটি সত্য, কোনটি সুন্দর। কোনটি ধর্ম আর কোনটি ধর্ম নয়।

অন্যের উপর জোর করে নিজের ধর্মীয় বিশ্বাস, রাজনৈতিক আদর্শ চাপিয়ে দেওয়ার নামইতো ফ্যাসিজম, স্বেচ্ছাচারিতা, সাম্প্রদায়িকতা এবং জঙ্গিবাদিতা।

একবার ভাবুন- জোর করে নিজের বিশ্বাস অন্যের উপর চাপিয়ে দেওয়ার যে চর্চা আপনি করতে চাচ্ছেন, সেই একই রকম চর্চা যদি কেউ আপনার ওপর করে- তখন আপনার কেমন লাগবে? 

এত কিছু বলার পরও যদি আপনি মনে করেন বাছ-বিচার না করে অর্থাৎ সেই ব্যক্তি মানসিক ভারসাম্যহীন নাকি সুস্থ মানুষ; তা যাচাই না করে যাকে তাকে রাস্তা-ঘাটে ধরে তাদের চুল-দাঁড়ি-গোঁফ কাটার প্রয়োজন আছে। তাহলে দয়া করে তাদের শরীরের আরো যে সব জায়গার চুল টুল কাটার দরকার প্রয়োজন আছে সেসবও পরিষ্কার করে দিবেন। আমার মনে হয় পাগলতো তারা ওসবও ঠিক মতো পরিষ্কার করে না।

কারো ইচ্ছার বিরুদ্ধে আপনাদের এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে আমরা হয়ত আপনাদেরকে কিছুই বলতে পারবো না, শুধু ঐ পাগলের মতো আল্লাহকে ডেকে বলবো- ‘আল্লাহ তুই দেহিছ’।

—-----------

‘আল্লাহ তুই দেহিছ’

মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ

২৫ সেপ্টেম্বর ২৫

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ