পাঞ্জাবি হয়তো একটু ছিঁড়ে বা পুড়ে যেত, সেটি সামান্য হলেও মনে একটি দাগ লেগে থাকতো। সারাক্ষণই মনে উসখুস ভাব থাকতো, ইস নতুন পাঞ্জাবিটা ছিড়ে গেল, পুড়ে গেল ! আবার কিছুটা লজ্জাও লাগতো, পাঞ্জাবির এই ছেঁড়া-পোড়া অংশটিকে কেউ দেখছে না তো। সে আবার কী ভাববে !
কোনো কাপড় একটু সামান্য ছিঁড়ে পুড়ে গেলে সেটি ফেলে দিয়ে আবার নতুন আরেকটি কেনার মতো অবস্থা তো তখন ছিল না, এখনো নাই। তখন ভাবতাম কেন আমার সাথে বারবার এরকম হয়। সবার তো ছিঁড়ছে না, আমারই জামা কাপোড়ই বারবার কেন ছিঁড়ছে ?
ভাবতাম এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কি । শহরের সব রিকশাওয়ালাকে তো আর সতর্ক করা যাবে না যে- ভাই আপনার একটু সাবধানে রিকশা চালান। ফুটপাত ঘেঁসে না চালিয়ে মূল রাস্তা দিয়ে চালান। আমাদের মতো মধ্যবিত্তের গায়ের উপরে এসে রিকশা উঠিয়ে দিবেন না।
অথবা শহরের সব সিগারেট খোরদের কেও বলা যাবে না, ও ভাই- ও চাচা- আপনারা একটু সাবধানে সিগারেট খাবেন। খাওয়ার সময় এলোপাথাড়ি হাত নাড়াচাড়া করবেন না। যাতে অন্যের গায়ে আগুনের স্ফুলিঙ্গটি না পরে। আপনারা সিগারেট খাওয়া শেষে বাকি অংশটুকু ফেলার সময় সাবধানে ছুঁড়ে ফেলবেন বা আগুনটুকু আগে নিভিয়ে তারপরে ছুঁড়ে ফেলবেন।
তাহলে সমাধান কি ? এই সমস্যা থেকে বাঁচার উপায় কি ? ভেবে ভেবে শেষে সিদ্ধান্ত নিলাম- সবাইকে যখন সতর্ক করা যাবে না, তখন সতর্ক হতে হবে নিজেকেই। তারপর থেকে রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় যথেষ্ট সাবধানে হাঁটি। গায়ের উপর যেন কোনো রিকশা না এসে পড়ে, এই জন্য মূল রাস্তা ছেঁড়ে কিছুটা দূরত্ব নিয়ে হাঁটি। ফুটপাতে হাঁটার সময় যথাসম্ভব ভিড় এড়িয়ে চলি। মানুষের গা ঘেঁষে নিজে যেমন হাঁটি না, তেমনিভাবে লক্ষ্য রাখি অন্য কেউ যেন আমার গাঁ ঘেঁষে না চলে।
একটা সময় এটি অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। ফলে তারপর থেকে নতুন বা পুরাতন কোনো পাঞ্জাবিই আর ছেঁড়ে নাই, কারো সিগারেটের আগুনও লাগে নাই। অনেক বছর হয়ে গেল; এখন আমাকে আর এরকম ডিফেক্টেড কাপড় পড়তে হয় না। হয়ত পুরোনো কাপড় পরি, কিন্তু ছেঁড়া কাপড় আর পড়তে হয় না।
পাঞ্জাবি বাঁচানোর ফরমুলা এখন নিজের জীবনেও অ্যাপ্লাই করি। তাই ঝামেলা হতে পারে এমন মানুষ, সংগঠন, প্রতিষ্ঠান বা অনুষ্ঠান থেকে নিজেকে যথা সম্ভব নিজেকে দূরত্বে রাখার চেষ্টা করি। আমিও ভালো থাকি, তারাও ভালো থাকুক। লেখালেখির বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রেও একই ফরমুলা।
মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ
২১ মে ২৫
0 মন্তব্যসমূহ