Ticker

6/recent/ticker-posts

‘আবদুল রসুল ও বাংলার রাজনীতি’-মামুন সিদ্দিকী


ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যে কয়েকজন খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব তাঁদের জ্ঞান, প্রজ্ঞা, মেধা, সৃজনশীলতা ও আত্মত্যাগের কারণে ভারতীয় উপমহাদেশে বহুল পরিচিত তাদের একজন নাসিরনগরের কৃতিসন্তান ব্যারিস্টার আবদুল রসুল। প্রথম বাঙালি ব্যারিস্টার ও বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ আব্দুর রসুলকে নিয়ে একটি গবেষণা গ্রন্থ রচনা করেছেন বাংলা একাডেমির গবেষণা কর্মকর্তা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রিয় মানুষ শ্রদ্ধেয় মামুন সিদ্দিকী ভাই। এক দুপুরে বাংলা একাডেমি কার্যালয়ে তাঁর কাছ থেকে উপহার পেলাম এই মূল্যবান গ্রন্থটি।

‘আবদুল রসুল ও বাংলার রাজনীতি’ শিরোনামে প্রকাশিত বইয়ের প্রথম ফ্লাপে তিনি লিখেছেন- কীর্তিমান বাঙালি আবদুল রসুল (১৮৭৪-১৯১৭) স্বীয় মেধা, প্রজ্ঞা ও আদর্শবাদিতার গুণে বাংলার সমাজ ও রাজনীতিতে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিলেন। বিলেতে উচ্চশিক্ষা সূত্রে প্রাপ্ত উদারনৈতিক ও সমাজবাদী দর্শনের আলোকে তিনি বাংলার বিভক্ত ও নির্জীব সমাজকে, বিশেষত মুসলিম সম্প্রদায়কে উজ্জীবিত করতে চেয়েছিলেন। হিন্দু-মুসলিম ঐক্য ও সম্প্রীতি, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রদর্শন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও স্বাধিকার চেতনায় সমৃদ্ধ তাঁর চিন্তাভুবন সমকালীন বাংলায় লাভ করেছিল জাতীয় মর্যাদা। বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলন, স্বদেশি আন্দোলন, জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন, লক্ষ্ণৌ চুক্তি প্রভৃতিতে রাজনৈতিক ভূমিকা এবং রোকেয়ার শিক্ষাপ্রসারে সহযোগ, ‘সওগাত’ পত্রিকা প্রকাশে উৎসাহদান, ‘দি মুসলমান' প্রকাশ প্রভৃতি সমাজগঠনমূলক কর্ম ব্রিটিশ উপনিবেশ-ক্লিষ্ট রাষ্ট্র ও সমাজকে দিয়েছিল ভিন্নমাত্রা। বর্তমান গ্রন্থে উনিশ শতকের পটভূমিতে ইতিহাসের বিস্মৃত-অশ্রুত উপকরণের আলোকে বিশ্লেষণাত্মভাবে উঠে এসেছে আবদুল রসুলের জীবন, রাজনীতি এবং তাঁর কাল-পরিচয়। যুগের বিভ্রম ও বিচ্যুতির বিপ্রতীপে জাগর-চৈতন্যে তিনি কীভাবে বাঙালি সমাজকে মুক্তিচেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিলেন এই গ্রন্থ তারও বিশেষ পরিচয়বহ। সমন্বয়বাদী সমাজ ও রাষ্ট্রগঠনে প্রেরণাদান এবং বাঙালির মুক্তিরেখা অনুধাবনে গ্রন্থটি সর্বমহলে সমাদৃত হবে-এ আমাদের প্রত্যাশা।

উল্লেখ্য জনাব মামুন সিদ্দিকী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘আবদুল রসুল ও বাংলার রাজনীতি' বিষয়ে এমফিল ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে ‘বাঙালির সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ধারা : ১৯০১-১৯৪৭' বিষয়ে গবেষণা করছেন । আধুনিক বাংলার সামাজিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ইতিহাস এবং মুক্তিযুদ্ধ, মানববিদ্যা ও স্থানীয় ইতিহাস তাঁর গবেষণার ক্ষেত্র।

তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ-প্রবন্ধ ও গবেষণাগুলো হলো : ‘বাঙালির সংস্কৃতি সাধনা' (২০১৮), ‘মুক্তিযুদ্ধের অজানা ভাষ্য' (২০১৭), ‘কুমিল্লায় ভাষা আন্দোলন' (২০০৪), ‘মুক্তিযুদ্ধের কিশোর ইতিহাস : কুমিল্লা জেলা' (২০১৭), ‘মুক্তিযুদ্ধে সংবাদপত্র : আমোদ' (২০০০), '১৯৭১ : কুমিল্লা পুলিশ লাইন্স' (২০১৭), ‘রবীন্দ্রনাথ : গল্পসল্প' (২০১১), ‘বেলতলী গণহত্যা' (২০১৪), ‘কুমিল্লা পুলিশ লাইন্স গণহত্যা' (২০১৮) প্রভৃতি। এছাড়াও প্রকাশিত হয়েছে বেশ কিছু জীবনীগ্রন্থ : ‘ভাষাসংগ্রামী মাহবুব উল আলম চৌধুরী' (২০১২) ও ‘শহিদ সার্জেন্ট জহুরুল হক' (২০১৬); সম্পাদিত-গ্রন্থ : ‘মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক শ্রেষ্ঠ প্রতিবেদন' (২০১৩), 'মুক্তিযুদ্ধের উপেক্ষিত বীর যোদ্ধারা' (২০০৮), ‘কুমিল্লার সমাজ ও সংস্কৃতি' (২০১১), ‘হালী মোস্তফা রচনা সংগ্রহ (২০০৮), ‘মুনতাসীর মামুন রচনাবলি’ (দশ খণ্ড), ‘আহমদ রফিক রচনাবলি' (প্রথম খণ্ড, সহ-সম্পাদনা, ২০২২), ‘ঐতিহাসিকের মানসজগৎ : মুনতাসীর মামুনের সাক্ষাৎকারগুচ্ছ' (২০২১) প্রভৃতি।

কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ জনাব মামুন সিদ্দিকী কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার (২০১৭), বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী-প্রবর্তিত জাতীয় অধ্যাপক সালাহ্উদ্দীন আদ পুরস্কার (২০১৮), ব্যারিস্টার আবদুল রসুল স্মৃতিপদক (২০১৭) ও বিনয় সাহিত্য সংসদ সম্মাননা (২০১৬) প্রভৃতি অর্জন করেছেন ।

শ্রদ্ধেয় মামুন সিদ্দিকী ভাইয়ের জন্ম ১৯৭৮ সালে। পৈত্রিকসূত্রে তিনি কুমিল্লার অধিবাসী, মাতৃজ্ঞাতি সম্পর্কে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তথা আমাদের প্রিয় মানুষ। ‘আবদুল রসুল ও বাংলার রাজনীতি’ গ্রন্থটি গ্রহণের সময় ছবি ফ্রেমে যুক্ত ছিলেন বাংলা একাডেমিতে কর্মরত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আরেক গুণী মানুষ, কবি ও প্রাবন্ধিক তারিক সজীব ভাই।

‘আবদুল রসুল ও বাংলার রাজনীতি’ গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমি গবেষণা উপবিভাগ। বইটির মুদ্রিত মূল্য চাহিদা ৪২০ টাকা মাত্র। বাংলা একাডেমির পুস্তক বিপণন কেন্দ্রসহ আসছে অমর একুশে গ্রন্থমেলার বাংলা একাডেমি স্টল ও দেশের স্বনামধন্য লাইব্রেরিগুলোতে পাওয়া যাবে এই মূল্যবান গ্রন্থটি। গ্রন্থটির বহুল প্রচার প্রত্যাশা করছি।

ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতাসহ
১৫ জানুয়ারি ২৪

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ