Ticker

6/recent/ticker-posts


 

রিকেটশিয়া

মানুষের ডেঙ্গু জ্বর হয়, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া জ্বর হয়। কালা জ্বর, সাদা জ্বর হয়, নিউমোনিয়া-ঠান্ডা জ্বর হয়। জ্বরে জ্বরে মানুষ কাবু হয়। কয়েকদিন আবু-কাবু থেকে আবার সুস্থ হয়। কিন্তু গত ১২ দিন যাবত আমার জ্বর ভালো হওয়ার কোনো নামই নেই। গত ১২ দিনে এই জ্বর আমাকে শুধু কাবুই করে নাই, একেবারে ঘায়েল করে ফেলেছে। জ্বরের ভাবসাবও সাহেবজাদার মত। মন চাইলে আসে, মনে চাইলে যায়। এক বেলা আসে, আরেক বেলা যায়। সকালে জ্বর থাকলে দুপুরে থাকে না, আবার বিকেলে আসলে রাতে থাকে না। আবার কোনোদিন সারারাত ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা কিন্তু সকাল বেলা হাওয়া

 

যখন তিনি আসেন তখন গায়ে ১০০ থেকে ১০২ ডিগ্রি জ্বর থাকে। সাথে প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, বিভিন্ন পেশিতে ব্যথা বমি বমি ভাব। ৪৮ ঘণ্টায় মাত্র ঘণ্টা ঘুমিয়েছি। শত চেষ্টা করেও এর ঘুমাতে পারছিলাম না। একদিন সারাদিন না খাওয়া অথচ এক ফোঁটা খিধেও পেলো না। আর যখন জ্বর থাকে না তখন মনে হয় আমি পুরোপুরি সুস্থ, আমার কোনো রোগেই হয়নি। 

 

এই যখন অবস্থা- তখন কয়েকদিন আগে সদর হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার জাকারিয়া সাহেবের শরণাপন্ন হলাম। তিনি দেখলেন, ওষুধ দিলেন। ঘুম, খিধের সমস্যার সমাধান হলো, কিন্তু জ্বর তার স্বভাব পাল্টালো না। ফলে দু-দিন পর আবার ডাক্তার কাছে গেলাম। নতুন করে সমস্যার কথা বললাম। এবার তিনি চারটি পরীক্ষা দিলেন। এই হাসপাতাল, সেই হাসপাতাল দৌড়াদৌড়ি করে দু-দিন পর পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে আর যখন ডাক্তারের কাছে গেলাম। তিনি কিছু ওষুধ লিখে দিয়ে এক সপ্তাহ পর আবার দেখা করতে বললেন। 

 

ডেঙ্গু জ্বর আশঙ্কা করেছিলাম- সেটা যে হয়নি তা রিপোর্টেই লেখা আছে। তবে অন্যান্য রিপোর্টে কী লেখা আছে সেটা বোঝার সাধ্য তো আর আমার নাই। তাই ডাক্তার সাহেবকে বললাম- আমার কি অসুখ হয়েছে ? তিনি বললেন- ‘রিকেটশিয়া জ্বররিকেটশিয়া জ্বরআবার কি, তা আমার বাপের জন্মে শুনি নাই। আপনারা হয়তো শুনে থাকবেন কিন্তু আমি ইহ জন্মে এই জ্বরের নাম শুনি নাই

 

হাসপাতাল থেকে বের হয়ে অজ্ঞতা কিছু এমবি দক্ষিণা দিয়েগুগল বাবা ডট কম’- এর শরণাপন্ন হলাম। তিনি জানালেনহে বৎস, এই জ্বরের জন্য দায়ী জীবাণু রিকেটশিয়া কে বলা হয় অবলিগেট ইন্ট্রাসেলুলার ব্যাক্টেরিয়া অর্থাৎ এরা জীবন্ত কোষের বাইরে এরা বেশিক্ষণ বাঁচে না। এই জীবাণু মানব শরীরে ছড়ায় মূলত বাহ্যিক পরজীবী যেমন উকুন, মক্ষিকা (flea), আঁটুলি (tick) ইত্যাদির মাধ্যমে। টাইফাস টাইফয়েড দুটি আলাদা ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা ঘটিত ভিন্নধর্মী রোগ

 

আমি আরো কিছু এমবি দক্ষিণা দিয়ে বললাম- বাবা আপনি কি বলছেন কিছুই বুঝলাম। একটু বিস্তারিত বলবেন কি ? এবার গুগল বাবা ছু-মন্তর-ছু দিয়ে নিচের এই লিংকটি দিয়ে বলল এখানে বিস্তারিত লিখে রেখেছি, তুই দেখে নে, আমার অত কথা বলার সময় নেই

 

https://www.myupchar.com/bn/disease/rickettsial-infection

 

যাইহোক- গুগল বাবার নির্দেশনা মত আমি লিঙ্কে গেলাম এবং বিস্তারিত পড়ে কিছু বুঝলাম, আর কিছু বুঝলাম না। তবে এটা বুঝলাম ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক সপ্তাহখানেক আমাকে বিশ্রামে থাকতে হবে। এই রোগটি ছোঁয়াচে না হলেও সবার থেকে আলাদা থাকার পরামর্শ দিয়েছে নির্ধারিত লিংক। 

 

বলা বাহুল্য যে, এই রোগ শনাক্ত করা মোটামুটি কঠিন, এবং এই রোগের প্রতিরোধের জন্য নির্ধারিত কোনো ভ্যাকসিন নেই, ফলে কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে এই রোগের সংক্রমণের স্থায়িত্ব প্রবলতা কমানো হয়। দুঃখের ভিতর মজার কথা এই যে, রিকেটশিয়া আবার অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানিকৃত এক রোগ এই কথা জানার পর থেকে নিজেকে কেমন যেন প্রবাসী রোগী, প্রবাসে রোগী  ফিলিং হচ্ছে

 

সংযুক্তি: গত মাসেও একবার শরীরে গ্লুকোজ ফল্ট করায় একদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। সেদিন বমি হতে হতে মনে হচ্ছিল নাড়ি, ভুঁড়ি, কলিজা সব বের হয়ে মারা যাচ্ছি। বাসার লোকজন তাড়াতাড়ি ধরাধরি করে বাসার পাশের হাসপাতালে নিলো। অবস্থা দেখে ডাক্তার হাতে একটা স্যালাইন পুশ করে সাথে কিছু ইনজেকশন মিক্স করে ঘুম পাড়ি দিলো। সকালের ঘটনা, ঘুমে ঘুমে স্যালাইন শেষ হতে না হতেই ঘুম ভেঙে দেখি বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা প্রায়। 

 

মনে পড়ল ইনজেকশন পুশ করার ডাক্তারের করা প্রশ্নগুলো- ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করি কি না, রাতে ঠিক মত ঘুম হয় কি না, রাত জেগে কি মোবাইল বা কম্পিউটার দেখি কি না, শারীরিক পরিশ্রম করি কি না ? আমার সব উত্তর ছিল নেতিবাচক। ডাক্তার বললেন- এই আপনার শরীরের গ্লুকোজ ফল্ট করেছে। গতবারের অভিজ্ঞাতায় এবার একটু আগে থেকেই চিকিৎসা সেবা নিতে তৎপর ছিলাম। কেননা আমার অসুস্থতায় পরিবারের সবাই কষ্ট করে। সাথে আমার ডিউটি লেখা লেখিও বাঁধা প্রাপ্ত হয়

 

অতএব আগামী কিছুদিন সকল প্রকার আড্ডা, অনুষ্ঠান, মিটিং এবং সৎসঙ্গ থেকে বিরত থাকতে চাচ্ছি। বলা বাহুল্য অসুখটা যখন থাকে না তখন আমি পুরোপুরি সুস্থ থাকি এই সময়টা লেখালেখি নিয়েই ব্যস্ত থাকতে চাই। অর্ধাঙ্গী এবং কন্যা পরিপূর্ণভাবে আমার সেবা শুশ্রা করে যাচ্ছে। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আপনাদের সকলের দোয়াপ্রার্থী

 

মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ

১২ নভেম্বর ২০২৩



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ