কলা ব্যাপারীর গ্রুপে ডিম ব্যাপারীর পোস্ট। ডিম ব্যাপারীর গ্রুপে পেঁয়াজ ব্যাপারীর ছবি। পেঁয়াজ ব্যাপারীর গ্রুপে মুলা ব্যাপারীর হানা। করলা ব্যাপারীর সুযোগ পাইলে এই গ্রুপে সেই গ্রুপে ‘দুটো তেতো’ কথা শুনিয়ে দেয়। আবুল লবণ ব্যাপারীর বুদ্ধিশুদ্ধি কম, যেকোনো পোস্টে ‘লাইক’ আর ‘সহমত’ কমেন্ট তার করাই লাগে। মরিচ ব্যাপারীর ঝাল ঝাল পোস্টে ভয়ে কেউ ‘হ্যাঁ’ বলে না, আবার ‘না’ও বলে না। আলু ব্যাপারী কমন লোক, সব গ্রুপেই তার সরব উপস্থিতি। একই পোস্ট বিভিন্ন গ্রুপে কয়েকবার না দিলে তার আবার রাতের ঘুম হয় না।
বেগুন ব্যাপারী আছে বড্ডো বেকায়দায়। গুণ না থাকায় এসব গ্রুপে কিছু বলতেও পারে না, গুণীদের গুণাগুন দেখতে আবার গ্রুপ থেকে বেরোও হতে পারে না। গুল্লুমুল্লু টমেটো ব্যাপারী এতো কিছু বোজো না, কেউ তারে রাখছে, তাই সে থাকছে। শাক চাষি নানা গ্রুপে বসে বসে ঝিমায়। পটল ব্যাপারী বড্ড চালাক, সে সব গ্রুপে চুপচাপ থাকে আর কে কি বলে, কে কি করে সবকিছুতেই গোয়েন্দা নজর রাখে।
বলছিলাম বিভিন্ন মেসেঞ্জার গ্রুপ-রঙ্গর কথা। রঙ্গ বলছি এই কারণে যে, যে গ্রুপ যে কারণে খোলা হয়, সেই গ্রুপে ঐ বিষয়টি ছাড়া অন্য আর সবকিছুই চর্চা হয়। কয়েক মাস আগে এরকম প্রায় ২০টি রঙ্গশালা থেকে লিভ নিয়েছিলাম। আরো কয়েকটি বাকি ছিল। এগুলো থেকে আজকে নিলাম।
নিজেকে এখন অনেক হালকা হালকা মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে রকেটের গতিতে মঙ্গল গ্রহে না যেতে পারলেও চাঁদের দেশে ঠিকই যেতে পারবো। আচ্ছা, চাঁদের দেশে গিয়ে কি করব জানেন। চাঁদের বুড়িকে বলব- বুড়ি তোমার এত ধৈর্য কেনো হাজার বছর ধরে চরকা কেটেই যাচ্ছো, কেটেই যাচ্ছ। একবার বাংলাদেশিদের মেসেঞ্জার গ্রুপে ঢুকে দেখো হাজার বছরের সুতা কাটার বিদ্যা ভুলে যাবে।
কেউ আবার শুভ সকাল, শুভ দুপুর, শুভ রাত্রি। দিনরাত তার শুভ কামনা জানাইতে জানাইতে তার ২৪ ঘণ্টা শেষ। সে এতো সময় পায় কীভাবে জানি না। মনে হয় সময়ের অভাবে খাওয়া আর বাথরুম এক সাথেই করে। গান, ওয়াজ, পিরের কেরামতি, ভালোবাসার গল্প, ফানি ভিডিও, টিকটিক, অবাক তথ্য, সংবাদ, রাজনৈতিক মিছিল-সভা, আর নানা পণ্যের মার্কেটিং এর ভিডিওর সুনামিতে যারা আমাদের মেসেঞ্জার ফুল করে ফেলেন, তারা কি ভাবেন যে, আপনারা মোবাইলে এমবি ভরেন আর আমরা মোবাইলে কাঁঠাল পাতার কষ ভরি! আপনারা এগুলো যে আইডি বা পেজে দেখেন, সেগুলো তো আমরাও দেখি। তাহলে আলাদা করে মেসেঞ্জারে পাঠান কেন। যদি ভেবে থাকেন আপনারা দেখেছেন আমরা দেখি নাই, তাহলে নিজের আইডিতে আপলোড করেন, শেয়ার করেন। আমরা সেখান থেকে দেখে নিব। কিন্তু মেসেঞ্জারে পাঠাবেন কেন?
এখন সবাই মেসেঞ্জারে জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহার করে। আপনাদের কিছু আবুলের কারণে মেসেঞ্জার এবং মেসেঞ্জার গ্রুপগুলোর বাজে অবস্থা। হাতে টাকা থাকলেই স্মার্টফোন কেনা যায়। আইডি খুলতেও কোন ঝামেলা নাই। কিন্তু ফেসবুক মেসেঞ্জার ব্যবহারে কিছু নিয়ম আছে, এগুলো না জেনেই যারা ব্যবহার করেন। তাদেরকে গণ্ডমূর্খ ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে নানা শ্রেণি পেশার, নানা বয়সের, নানান মতের মানুষ থাকে। যাদের একেক জনের সাথে আমাদের একরকম সর্ম্পক। তাই এখানে ছবি নির্বাচন ও শব্দ চয়নে আলাদা বৈশিষ্ট্য ও বৈচিত্র্য রাখতে হয়। যাতে এটি বেশিরভাগ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
সৃষ্টি না করে।
কেউ আবার জরুরি প্রয়োজনে মেসেঞ্জারে নক করে কিন্তু আসল কথা বলার আগে হাই, হ্যালো, কেমন আছেন, শরীর কেমন, সালাম-টালাম দিয়ে এরপরে ঘণ্টাখানেক পরে বলবে আপনার কাছে অমুকের মোবাইল নাম্বার আছে?। প্রথমবার কারো সঙ্গে যোগাযোগ না হলে দ্বিতীয় বারবার যোগাযোগের ক্ষেত্রে এসব পরিত্যাগ করাই ভালো বরং সরাসরি যে প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে চাচ্ছেন সেটি বলে নেওয়ায় বুদ্ধিমানের কাজ।
কিছুদিন আগে এক ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ থেকে নিয়েছিলাম। কিন্তু এডমিন আমাকে পুনরায় এড করে। আমি আবার লিভ নিলাম। তিনি আবার এড করলেন। এভাবে আমি প্রায় ছয় বার লিভ নিয়েছে উনি ছয়বারই আমাকে অ্যাড করেছেন। তারপর আমি উনার পার্সোনাল মেসেঞ্জারে নক করে বললাম- আপনি আমাকে বারবার এড করছেন কেন? তিনি উত্তর দিলেন এখানেতো অনেক জরুরি আলাপ থাকে সেগুলো জানানোর জন্য। আমি বললাম জরুরি কাজ থাকলে আমাকে সরাসরি মেসেঞ্জারে নক করবেন আমি যত দ্রুত সম্ভব সারা দেবো। আর এতটুকু যদি না পারেন। তাহলে আমার সঙ্গে আপনার জরুরি কাজ বা যোগাযোগ রাখার দরকার নেই।
সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনাদের অনেকের চেয়ে আমি যথেষ্ট অ্যাক্টিভ। আমার পার্সোনাল মেসেঞ্জারে নক করলে আমি যে কারো আহ্বানে এই সাড়া দেই। দয়া করে আমাকে কেউ কোনো মেসেঞ্জার গ্রুপ নামক রঙ্গশালায় অ্যাড করবেন না।
মেসেঞ্জার রঙ্গ-রণে দিলাম ভঙ্গ
মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ
৭ জুন ২০২৩
0 মন্তব্যসমূহ