* গতকাল সন্ধ্যায় একজন শিক্ষকের সঙ্গে আলাপ করছিলাম। কথা প্রসঙ্গে জানতে চাইলাম, আপনি যে বাড়িতে থাকেন তা কি আপনার নিজের বাড়ি না’কী ভাড়া থাকেন। তিনি জানালেন ভাড়া থাকেন। আমি বিনয়ের সাথে বললাম- এতো বছর চাকরি করেছেন, রিটায়ার্ড করেছেন। এখনো নিজের বাড়ি করেননি কেন ?
তারপর তিনি যা উত্তর দিলেন তাতে আমি রীতিমতো অবাক হয়েছি। তিনি বললেন, শোনেন- চাকরি জীবনে আমি দুইটা জিনিস অর্জন করতে চেয়েছি। (এক) আমার ছেলেমেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী হোক। (দুই) আমার ছেলেমেয়েদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা বাড়ি হোক।
আমি যদি বাড়ি করতে চাইতাম তাহলে হয়তো করতে পারতাম। কিন্তু আমি বাড়ি করলে একটা বাড়ি করতে পারতাম, এর বেশি না। কিন্তু এখন আমার তিন ছেলে-মেয়ে সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী এবং তারা আলাদা আলাদা বাড়ি তৈরি করার যোগ্যতা অর্জন করেছে। এখন বলেন, আমি বাড়ি না তৈরি করে ভুল করেছি; না সঠিক কাজ করেছি।
আমি বললাম- স্যার, অবশ্যই আপনি সঠিক কাজ করেছেন। কারণ আপনি একটি বাড়ি তৈরি করতে গেলে ছেলেমেয়েদের হয়তো সঠিকভাবে মানুষ করতে পারতেন না। প্রতিষ্ঠিত করতে পারতেন না। তখন আপনার এই একটি বাড়ি নিয়ে তিন ছেলে-মেয়ে ঝগড়া ঝাঁটিতে জড়াতো। কিন্তু তা না করে আপনি তাদেরকে মানুষের মতো মানুষ করেছেন। তারা প্রত্যেকেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং এখন নিজ নিজ বাড়ি তৈরি করার যোগ্য অর্জন করতে পেরেছে।
** মাসখানেক আগে প্রথিতযশা একজন সাহিত্যিকের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। কথা প্রসঙ্গে জানলাম তিনি অনেকটাই সংসার বিমুখ। আমি জিজ্ঞেস করলাম- সংসারে সময় দেন না বা দিতে পারেন না; বুঝলাম, কিন্তু আপনার ছেলে মেয়েদের নিশ্চয়ই সময় দিয়েছেন। তিনি উত্তর দিলেন, না তাদেরও খুব বেশি সময় দিতে পারিনি।
তারপর বললেন- মানুষ কতোভাবে টাকা পয়সা উপার্জন করে এবং ছেলে-মেয়ে মানুষ করার পিছনে তা ব্যয় করে, তারপরও তারা ছেলে-মেয়েদেরকে মানুষ করতে পারে না, তাদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারে না। কত ছেলে-মেয়ে বিপথে চলে যায়। আর আমি সংসারে সময় না দেওয়ার পরেও আমার ছেলে-মেয়েরা মানুষ হয়েছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নিয়েছে এবং প্রত্যেকেই নিজের মতো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এটা কীভাবে সম্ভব হলো, আমি বললাম। তিনি বললেন- তারা দেখেছে তাদের বাবা অর্থের পেছনে ছোটে নাই। খারাপ মানুষ বা খারাপ কাজের পেছনে ছোটে নাই। এগুলো দেখে দেখেই তারা নিজেরাও ভালো হয়ে চলার চেষ্টা করেছে এবং সফল হয়েছে।
এই দুই পিতার জীবন আমাদের প্রত্যেকের জন্য শিক্ষণীয়।
প্রথম জনের থেকে শিক্ষা হলো:
আমরা সন্তানকে সম্পদ দিয়ে যেতে চাই। কিন্তু তাদের সম্পদ হিসেবে তৈরি করতে চাই না। এ কারণেই হয়তো অনেকের ছেলে-মেয়ে মানুষ হতে পারে না। প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। একজন বাবা-মা হিসেবে সন্তানকে সম্পদের উত্তরাধিকারী হিসেবে তৈরি না করে বরং সন্তানকেই সম্পদ হিসেবে তৈরি করাটাই সবচেয়ে বেশি বুদ্ধিমানের কাজ। এই শিক্ষক সেই কাজটিই করেছেন।
দ্বিতীয় জনের থেকে শিক্ষা হলো:
নিজে সৎ পথে না চললে, নিজে ভালো না হলে, সন্তানদের ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়িয়েও ভালো মানুষ হিসেবে তৈরি করা যায় না। সন্তানদের আগে নিজে ভালো হওয়ার বিকল্প নেই। কারণ ছেলে-মেয়েরা তাদের বাবা-মার কাছ থেকেই আচার-আচরণ, নীতি-নৈতিকতা শিখে থাকে। তাই একটি ভালো পরিবার, একজন আদর্শ বাবা-মা হাজারটা ভালো প্রতিষ্ঠান থেকে উত্তম।
দুইজন সফল পিতার গল্প
মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ
১৮ মে ২৩
সকাল ৭:৫৬
0 মন্তব্যসমূহ