কবি কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবি। তাঁর রচিত অসংখ্য ছড়া, কবিতা, গান, গল্প, নাটক, উপন্যাস বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ।
কবি নজরুল ইসলামের লেখনীচ বাঙালির জাতীয় চেতনার অন্যতম উৎস। নিজের লেখনী দিয়ে জীবনব্যাপী লড়াই করেছেন আপামর বাঙালির শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে। বাঙালির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তিনি বার বার তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের রোষানলে পড়েছেন। জেল খেটেছেন।
বিট্রিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামসহ বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে তাঁর লেখা আমাদের শক্তি ও সাহস যুগিয়েছে। তাঁর সংগ্রামী জীবন আমাদের ব্যক্তিগত ও জাতীয় জীবনে সফলতার প্রেরণা যোগায়।
তিনি তাঁর সাহিত্য কর্মে ইসলামের ইতিহাস-ঐহিত্য তুলে ধরে পশ্চাৎপদ মুসলিম জনগোষ্ঠিকে আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পথ দেখিয়েছেন। আবার সকল ধর্মের মানুষের মাঝে সাম্য, অসাম্প্রদায়িকতা ও ঐক্যের বার্তা দিয়ে গেছেন।
সমাজের দলিত-বঞ্চিত, নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের পক্ষে চলা তার কলম শোষকের নির্যাতনের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। কবির লেখায় এমন শক্তি ছিল যে, বিভিন্ন লেখার কারণে তিনি শাসকের রক্ত চক্ষুর রোষানলে পড়েছেন। আবার হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্মের কট্টরপন্থীদের তীর্যক সমালোচনার পাত্র হয়েছেন। তারপরও জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তিনি বিশ্ব মানবতার মুক্তির জয়গান গেয়েছেন।
তিনি প্রেমের কবি, প্রেরণার কবি, তারুণের কবি, দ্রোহের কবি, শক্তি ও সাহসের কবি, সাম্যের কবি, মানবতার কবি, অসাম্প্রদায়িক চেতনার কবি, তিনি বিদ্রোহী কবি। তিনি আমাদের জাতীয় কবি।
সকল সংকট-সংগ্রামে, সাফল্যের জয়গানে, আনন্দ-বেদনায় আজো তিনি প্রবল ভাবে প্রাসঙ্গিক।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ খ্রি. (১১ জৈষ্ঠ, ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) পশ্চিম বাংলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট (১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) ঢাকায় মৃত্যু বরণ করেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর হাজার ১৯৭২ সালের ২৪ মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারত সরকারের অনুমতি ক্রমে দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত কবি কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। ১৯৭৬ সালে কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান সহ একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।
উল্লেখ্য পুরাতন বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে কবির জন্ম তারিখ বাংলা ১১ জ্যৈষ্ঠ তথা ২৪ মে ছিল। কিন্তু বাংলা একাডেমি কর্তৃক বাংলা পঞ্জিকা সংশোধন করার পর ১১ জ্যৈষ্ঠ ২৫ মে হওয়ায় রাষ্ট্রীয়ভাবে কবির জন্মদিন ২৫ মে উদযাপন করা হয়।
আজীবন সংগ্রামী এই মহান কবির আজ ১২৩তম জন্মদিন। এ উপলক্ষে কবির স্মৃতির উদ্দেশ্যে জানাই গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
ছবিঃ ২০০৬ সালের কবির সমাধির সামনে আমি।
মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ
২৫ মে ২০২২ খ্রিঃ
0 মন্তব্যসমূহ