ডটকম
শব্দটির সাথে
কমবেশি
আমরা
সবাই
পরিচিত। বর্তমান সময়ে
ডটকম
আমাদের
জীবনের
সঙ্গে
ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে
আছে। আমরা
সবাই
একাধিক
ডটকমের
সঙ্গে
সংযুক্ত। প্রতিদিনই কয়েকবার কোনো-না-কোনো ডটকমের
ব্যবহার করে
থাকি। যেমন
ফেসবুক
ডটকম,
গুগল
ডটকম,
ইউটিউব
ডটকম। এছাড়াও
বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ওয়েবসাইট, বিভিন্ন অনলাইন নিউজপোর্টাল ডটকম
ছাড়া
আমরা
একদমই
চলতে
পারি
না। আর
ফেসবুক
ডটকমে
তো
প্রতিদিন অসংখ্যবার ঢোকা
হয়। প্রায়
সকল
ডটকমই
আমাদেরকে একই
প্রকার
সেবা
দিয়ে
থাকে,
সেটা
হচ্ছে
তথ্য
সরবরাহ
ও
প্রচার।
এতসব ডটকমের বাইরেও আরেকটি বিশেষ ডটকমের উপস্থিতি আমাদের প্রত্যেকের জীবনে রয়েছে। লেখার শুরুতেই আপনারা তার নাম জানতে পেরেছেন সেটি হচ্ছে “জ্ঞানী বাবা ডটকম”। এই “জ্ঞানী বাবা ডটকম” এর সম্পর্কে পরিচয় তুলে ধরার আগে আপনাদের বলে রাখা ভালো অন্যান্য ডটকমের সঙ্গে এই “জ্ঞানী বাবা ডটকম” এর অনেকগুলো মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। যেমন প্রায় সকল ডটকম ব্যবহার করার জন্য আপনাকে কোনো না কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস অর্থাৎ কম্পিউটার, ট্যাব অথবা মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে হবে এবং এগুলোতে ইন্টারনেট সংযোগ অপরিহার্য একটি বিষয়।
কিন্তু “জ্ঞানী বাবা ডটকম” এ কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস বা ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন হয় না। তাসত্ত্বেও ‘জ্ঞানী বাবা ডটকম’ আমাদেরকে খুব ভালোভাবে সার্ভিস দিয়ে থাকে। বাহ্ খুব ভালো না! কোন ডিভাইস কিনতে হয় না। ইন্টারনেটের সংযোগ লাগে না। মাসিক কোনো চার্জ নেই। সার্ভিসিং এর ঝামেলা নেই। এসব ছাড়াই দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর, “জ্ঞানী বাবা ডটকম” আপনাদেরকে ফ্রি সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে।
“জ্ঞানী বাবা ডটকম” এর আরেকটি ভালো দিক হচ্ছে, এটি শুধু তথ্য সরবরাহ বা প্রচারই করে না। এটি আপনাকে পরামর্শ দেয়। ক্ষেত্রবিশেষে বাধ্য করে নির্দিষ্ট কোনো কাজ করতে বা সিদ্ধান্ত নিতে। এইজন্যই এটি বাবা অর্থাৎ পিতার আসনে উপবিষ্ট। “জ্ঞানী বাবা ডটকম” এর সবচেয়ে অবাক করা যে তথ্যটি আপনাদের দেব তা হচ্ছে এ বাবা কোন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বা কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান লেখাপড়া না করেই সে মহাজ্ঞানী। পৃথিবীর সকল বিষয়ে তার যথেষ্ট জ্ঞান আছে। আছে শুধু একথা বললে ভুল হবে। বরং এতো পরিমাণ জ্ঞান আছে যে তারচেয়ে জ্ঞানী পৃথিবীতে আর কেউ নেই।
এবার নিশ্চয়ই আগ্রহী হচ্ছেন এই “জ্ঞানী বাবা ডটকম” কি জিনিস তা জানার জন্য। এটা বলে রাখা ভালো এত অবাক হওয়ার কিছু নেই। “জ্ঞানী বাবা ডটকম” আপনার সাথেই আছে। কয়েকটা উদাহরণ দিলেই বুঝতে পারবেন। ধরুন আপনার অসুখ হয়েছে, আপনি ডাক্তারের কাছে যাবেন। যেই না আপনি বিষয়টা মুখ থেকে বের করেছেন অমনি “জ্ঞানী বাবা ডটকম” হাজির। সে আপনাকে বলবে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কি দরকার, ফার্মেসি থেকে এই ওষুধটা কিনে আনেন । ভাল হয়ে যাবেন। ওষুধ আনার জন্য কোন ফার্মেসিতে যেতে হবে সেটাও সে বলে দেবে। ব্যস আপনার ডাক্তারের টাকা বেঁচে গেল এবং চিকিৎসাও হয়ে গেল। এই হচ্ছে “জ্ঞানী বাবা ডটকম” এর সেবার একটা নমুনা।
এরকমভাবে আপনার জীবনের চিকিৎসা, শিক্ষা, সাহিত্য, রাজনীতি, ব্যবসা, ধর্ম, কনস্ট্রাকশন, ঘোরাঘুরি, আড্ডা, বিয়ে, প্রেম, এমনকি চুরি-ডাকাতি, মদ, জুয়া, খুন-ধর্ষণ সকল বিষয়ে আপনাকে জ্ঞান দিতে, বুদ্ধি দিতে, সিদ্ধান্ত নিতে, “জ্ঞানী বাবা ডটকম” আপনাকে পরামর্শ দিবে। শুধু পরামর্শ দিবে না প্রয়োজনে সহযোগিতাও করবে। এবার নিশ্চয় বুঝতে পারছেন তো “জ্ঞানী বাবা ডটকম” কি জিনিস।
আপনি তাকে বুঝাতে পারবেন না যে, যে ব্যক্তি যে বিষয়ে অভিজ্ঞ, সেই বিষয়ে তার থেকে পরামর্শ নেয়া উচিত। কিন্তু না “জ্ঞানী বাবা ডটকম” তার নিজের কুপরামর্শ আপনার উপরে চাপিয়ে দেবে। আপনি দীর্ঘ পড়াশোনার পর একটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত উপনীত হয়েছেন যে কাজটি এভাবে করা উচিত। বিষয়টি এরকম এরকম। কিন্তু “জ্ঞানী বাবা ডটকম” কোন ধরনের লেখাপড়া ছাড়াই আপনাকে জানিয়ে দিতে পারবে এটা, এরকম না, এটাও ভাবে করলে ভালো হয়। এটা তো এরকম ছিল।
আবার ধরুন আপনি কোন একটি কাজ শেষ করছেন। কাজটি করতে গিয়ে আপনার এক সপ্তাহ, দশ পনেরো দিন, এমনকি বছরখানেক সময় লেগেছে। সবশেষে যখন আপনি কাজটি প্রেজেন্টেশন করবেন; তখন এই “জ্ঞানী বাবা ডটকম” এসে হাজির হবে বলবে, এটা তো এভাবে করল কেন, এটা করা ঠিক হয়নি, ঐভাবে করলে ভালো ছিল, আমি হলে এভাবে করতাম। এসব বলে আমার আপনার মেজাজ খারাপ করে দেবে, আপনার পরিশ্রমকে ব্যর্থ আখ্যায়িত করার চেষ্টা করবে। আপনার উৎসাহ নষ্ট করার চেষ্টা করবে। এবার বুঝতে পারছেন কে বা কারা “জ্ঞানী বাবা ডটকম”। আপনার জীবনে তার কতটুকু প্রভাব।
পরিশেষে “জ্ঞানী বাবা ডটকম” এর আরেক একটি উদাহরণ দিয়ে শেষ করব। একবার আমি পেঁয়াজ কেনার জন্য দোকানে যাচ্ছি। সঙ্গে এক বন্ধু “জ্ঞানী বাবা ডটকম”। দোকানদার নানা ব্রান্ডের আন্ডারওয়ার দেখাচ্ছে। সে আমাকে পরামর্শ দিচ্ছে এইটা নাও, এইটা ভালো হবে। খুব ভালো কথা। বন্ধু বন্ধুকে পরামর্শ দিচ্ছে। খুব ভালো জিনিস। পরামর্শের একপর্যায়ে দেখলাম সে আমাকে বলতেছে যে, এই রং ভালো হবে না ও রঙের টা নাও।
আমি ভাবলাম আন্ডারওয়ারতো এটাতো আন্ডারেই থাকবে। কেউ দেখবে না। তাহলে এখানে রঙের ভূমিকা কী। আমি চিন্তা করতে লাগলাম আর হাসতে লাগলাম। তখন আমার মাথায় এই বিষয়টা আসলো যে “জ্ঞানী বাবা ডটকম” কখনো যেহেতু প্রাতিষ্ঠানিক কোন জ্ঞান, নেই তারা অতীত ভবিষ্যৎ চিন্তা করে না, ফলাফল চিন্তা করে। নিজের গুরুত্ব বোঝাতে তাৎক্ষণিক একটি মতামত ফলানো হলো তাদের মুখ্য কাজ। আর তাই আমি ইদানীং “জ্ঞানী বাবা ডটকমের” পরামর্শ নেয়া থেকে বিরত থাকি। আর কেউ না চাইলে তাকে কোনো পরামর্শ দিই না। আর যে বিষয় আমি জানি না; সে বিষয়েতো মোটেও না।
তো যাই হোক জ্ঞানী “জ্ঞানী বাবা ডটকম” আপনারা আমার চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। যখন যেই ধরনের প্রয়োজন হবে। তথ্য নিয়ে, পরামর্শ নিয়ে সহযোগিতা নিয়ে আপনার সামনে হাজির হবে। তাদের থেকে সাবধান।
রম্য কথন “জ্ঞানী বাবা ডটকম”
মনিরুল
ইসলাম
শ্রাবণ
১৯
সেপ্টেম্বর ২০২১খ্রি. সকাল
৭টা
টেংকেরপাড়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
0 মন্তব্যসমূহ