Ticker

6/recent/ticker-posts

আজ জাতীয় কন্যা শিশু দিবস। (সঠিক জানুন, সঠিক দিবস পালন করুন।)


 

আজ জাতীয় কন্যা শিশু দিবস।

(সঠিক জানুন, সঠিক দিবস পালন করুন।)

কন্যা শিশুর প্রতি জেন্ডারভিত্তিক বৈষম্য রোধ, তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সুষ্ঠু বিকাশের বিষয়টিকে বৃহত্তর সামাজিক আন্দোলনে রূপ দেয়ার লক্ষ্যে ২০০০ সালে তৎকালীন সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি সরকারি আদেশের মাধ্যমে ৩০ সেপ্টেম্বরকে “জাতীয় কন্যা শিশু দিবস” হিসেবে পালনের ঘোষণা দেন। 

তখন থেকেই প্রতিবছর যথাযোগ্য মর্যাদায় সারাদেশব্যাপী দিবসটি পালিত হচ্ছে। প্রতি বছর এর একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। গত বছর বছরের ‘জাতীয় কন্যা শিশু দিবস’ এর প্রতিপাদ্য বিষয় ‘আমরা সবাই সোচ্চার, বিশ্ব হবে সমতার’। করোনার কারণে গত বছরের মত এবছরও এই দিবসটি সরকারি ভাবে ৩০ সেপ্টেম্বর এর পরিবর্তে ০৪ অক্টোবর বিশ্ব শিশু অধিকার দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহের সাথে মিলিয়ে উদযাপন করা হবে।

বাংলাদেশে জাতীয় কন্যা দিবস ছাড়াও জাতিসংঘের এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিবছর ১১ অক্টোবর “আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস” হিসেবে পালন করা হয়। ২০১২ সালে সারা বিশ্বব্যাপী এ দিবসটি পালন করা শুরু হলেও বাংলাদেশে এর পরের বছর অর্থাৎ ২০১৩ সাল থেকে “বিশ্ব কন্যা শিশু দিবস” পালন করা হচ্ছে। মেয়েদের শিক্ষার অধিকার পুষ্টি সহায়তা ও ন্যায় অধিকার, চিকিৎসা সুবিধা ও বৈষম্য থেকে সুরক্ষা নারীর বিরুদ্ধে হিংসা ও বলপূর্বক বাল্যবিবাহ বন্ধে কার্যকর ভূমিকা পালনের উদ্দেশ্যে এই দিবসের সূচনা হয়। 

উল্লেখ্য যে শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সচেতনতা সৃষ্টির জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বছরের একাধিকবার বিভিন্ন নামে শিশু দিবস পালন করা হয়। এর পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলো বিভিন্ন সময় নিজেদের মতো করে পালন করে জাতীয় শিশু দিবস। 

যেমন আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ২৪ জানুয়ারি “জাতীয় কন্যা শিশু দিবস” উদযাপন করে থাকে। এর বাইরে ভারত জাতিসংঘ ঘোষিত ১১ অক্টোবর “আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস”ও পালন করে থাকে। 

সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রবিবার “কন্যা দিবস” উদযাপন করতে দেখা যায়। বিগত কয়েক বছরে ভারতীয়দের সাথে মিল রেখে আমাদের দেশেও ব্যক্তি পর্যায়ে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রবিবার কন্যা শিশু দিবস পালনের প্রচলন শুরু হয়।

কিন্তু দিবসটি মোটেও ভারত বা বাংলাদেশের “জাতীয়” বা জাতিসংঘ ঘোষিত “আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস” নয়। এই দুই দেশেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দুটি কন্যা শিশু দিবস উদযাপন করা হয়। তাই নতুন ভাবে আরেকটি দিবস পালনের কোনো যৌক্তিকতা নেই বরং এটি উদযাপন এর ফলে আমাদের মূল দিবস দুটি তার গুরুত্ব হারাচ্ছে বলে আমি মনে করি। 

সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রবিবার যে কন্যা দিবস উদযাপন করা হয় তা মূলত শুরু করে “আর্কিস লিমিটেড” নামে ভারতীয় শুভেচ্ছা কার্ড নির্মাণকারী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তারা কন্যা শিশু সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে দিবসটি সৃষ্টি করেছে বলে দাবি করলেও এটি মূলত তাদের কার্ডের ব্যবসা বাড়াতে একটি প্রচারণা বলে অনেকে মনে করেন। ফলে দিবসটি ভারতে জাতীয় দিবসের মর্যাদা পায়নি। কিন্তু “আর্কিস লিমিটেড সুচতুর ভাবে “আর্ন্তাজাতিক কন্যা শিশু দিবস” দাবি করে। 

উল্লেখ্য জাতিসংঘ ঘোষিত আর্ন্তজাতিক কন্যা দিবস ১১ আক্টোবর,  যা ২০১২ সাল থেকে উদযাপিত হচ্ছে এবং ভারত সরকার কর্তৃক ঘোষিত জাতীয় কন্যা দিবস ২৪ জানুয়ারি যা ২০০৮ সাল থেকে ভারতে উৎযাপন হচ্ছে। তাহলে আমাদের দেশে হঠাৎ করে সেপ্টেম্বর শেষ রবিবার কন্যা দিবস পালনের যৌক্তিকতা কোথায় ?

গত ২৮ সেপ্টেম্বর অবাক হয়ে লক্ষ করলাম আমাদের কয়েকজন সংসদ সদস্য থেকে শুরু সরকারের উর্দ্ধতন কর্মকতা, সরকারি বেসরকারি কলেজ- বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষক, রাজনীতিবীদসহ সাধারণ মানুষ সবাই ২৮ সেপ্টেম্বর কন্যা দিবস দাবি করে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করেছে। অর্থাৎ সবাই একটি “ভূয়া কন্যা দিবস” পালন করেছে।

কেউ একজন বলেছে আজ কন্যা দিবস অমনি গুজবে বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়েছে কন্যা দিবস পালনে। কেউ যাচাই করার প্রয়োজন মনে করলো না। অনেকটা চিলে কান নিয়েছের মত অবস্থা। আচ্ছা কন্যা দিবস পালন না হয় ভালো কিছু। এমনিভাবে কত গুজবে গাঁ ভাসাই তার হিসেব আছে কি আমাদের কাছে। আমাদের এসব গুজবে “তুবা” মনিরা মা হারায়।  আমি কন্যা দিবস পালনের বিরোধী না, তবে ভূয়া কন্যা দিবস পালনের বিরোধী। 

গত বছর এবং এই বছর ইন্টারনেটে অনেক গুলি সাইট ঘাঁটাঘাঁটি করে এসব তথ্য সংগ্রহ করেছি এবং সত্যতা নিশ্চিত করেছি। এগুলি জানারপরও কেউ যদি নিজের সন্তানের ছবি যে কোন দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করতে চান; তা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে সেখানে “জাতীয় কন্যা দিবস”, “আন্তর্জাতিক কন্যা দিবস” “বিশ্ব কন্যা শিশু দিবস” এই জাতীয় শব্দ উল্লেখ না করাই বাঞ্ছনীয়। এর ফলে বিভ্রান্তি তৈরী হয়। 

আমি গত বছরও এই বিষয়ে একটি বিস্তারিত লেখা দিয়েছিলাম। এই বছরও এরকম একটি লেখা পোস্ট করার উদ্দেশ্য হলো গত কয়েকবছর যাবৎ এটা লক্ষ্য করছি যে, সরকারি কর্মসূচি ছাড়া আমরা নিজেদের কন্যা দিবসগুলোতে কোন ধরনের কর্মসূচির পালন করি না। এমনকি অনেকে জানেইনা আমাদের দেশে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস কবে, কখন বা কিভাবে পালন করা হয়। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াতেও বিষয়টি নিয়ে কোন পোস্ট করে না। 

কিন্তু ভিনদেশী একটি দিবসের দিবস উদযাপনে ব্যস্ত থাকে। এইভাবে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস নামে একটি দিবস আমাদের দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। আর এই দিবসে গা ভাসিয়ে দিয়েছে আমাদের তরুণ সমাজ। ভালোবাসা শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এর ব্যাপকতা অনেক, এটা আর তরুণ তরুণীদের বোঝানো যায় না।

পরিশেষে বলব, এ কথা অনস্বীকার্য যে, কন্যা-জায়া-জননীগণ অন্ধকারাচ্ছন্ন, কুসংস্কার, পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা ও ধর্মীয় আবরনে হাজার হাজার বছর ধরে যেরকম নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়েছিল, অধিকার বঞ্চিত হয়েছিলো তা বর্তমান বিশ্বে অনেকটাই কমে এসেছে। অনেক ক্ষেত্রেই নারীরা নিজের অধিকার আদায়, গ্রহণযোগ্যতা ও সক্ষমতা প্রদর্শন করছে।

অথাপী বিশ্ব বাস্তবতায় কন্যা শিশুর শারিরিক যত্ন, একটি নিরাপদ সমতাভিত্তিক সমাজ ও তাদের প্রাপ্য ন্যায্য অধিকার সমূহ এখনো পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। এখনো দেশে দেশে নানান স্থানে, নানান ভাবে মেয়ে শিশুদেরকে বঞ্চিত করা হয়। তাদের খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, পোষাক-পরিচ্ছেদসহ নানান মৌলিক চাহিদা থেকেই বঞ্চিত করা হয়। ক্ষেত্রবিশেষে কন্যাশিশু বঞ্চিত হয় তার নিজের ঘরে, নিজের বাবা-মা ও নিকট আত্মীয়দের কাছ থেকে।

তাই কন্যা শিশুর জন্য একটি সমতাভিত্তিক নিরাপদ বিশ্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে জনসচেতনতার বিকল্প নেই। সুতরাং এসব দিবস পালনের পালনের গুরুত্ব কম নয়।

আগামীর বিশ্ব হোক আমাদের কন্যাদের জন্য নিরাপদ।

সকল শিশুদের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইল।


মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

৩০  সেপ্টেম্বর ২০২১ খ্রি.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ