Ticker

6/recent/ticker-posts

নাসিরুদ্দিন হোজ্জার শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার নিনজা টেকনিক


নাসিরুদ্দিন হোজ্জা বিয়ের পর মাঝেমধ্যে শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যান। শ্বশুরবাড়িতে হোজ্জার ব্যাপক কদর, বরাবরই তাকে ভালো আপ্যায়ন করা হয়। তার পছন্দের নানা মুখরোচক খাবার রান্না করা হয়। তাই হোজ্জা সাহেব শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে যেতে কখনো ভুল করেন না। ছোট-বড় নানা উপলক্ষকে কেন্দ্র করে নিজের গাট্টি-বোচকা ঘুছিয়ে শ্বশুরবাড়ির দিকে রওনা হয় নাসিরুদ্দিন হোজ্জা। আর ঈদের সময়তো কখনই শ্বশুর বাড়ি যাওয়া মিস করেন না তিনি। অনেক সময় তার স্ত্রী তার সাথে থাকে, কখনোবা থাকে না। কিন্তু নাসিরুদ্দিন সাহেবের প্রিয় গাঁধাটি সব সময়ই তার শ্বশুরবাড়ির যাওয়ার সঙ্গী হয়।

একবার হলো কী- ঈদের কিছুদিন আগেই তার স্ত্রীর সঙ্গে কী এক বিষয় নিয়ে হোজ্জা সাহেবের প্রচণ্ড ঝগড়া বেঁধে গেল। শেষমেষ রাগ করে বউ চলে গেল বাপের বাড়ি। গেল যে গেল, আর আসার নাম নেই। কোনো যোগাযোগ করছে না বউ। এদিকে ঈদ ঘনিয়ে আসছে। প্রতি ঈদে শ্বশুরবাড়ি থেকে হোজ্জা সাহেবকে ঈদের দাওয়াত দেওয়া হয়। কিন্তু এবার তার স্ত্রী বাপের বাড়িতে গিয়ে তার নামে এমন নালিশ করেছে যে, শ্বশুরবাড়ি থেকে হোজ্জা সাহেব ঈদের দাওয়াত পাচ্ছেন না ।

ঈদের আগের দিন রাতে হোজ্জা সাহেব শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার জন্য ব্যাপক উদগ্রীব হয়ে উঠলেন। গত বছর শ্বশুরবাড়িতে খাওয়া মজাদার সব খাবারের স্বাদ এখনো তার জিভে লেগে আছে। দাওয়াত না পেলে এই বছর সেসব খাবার থেকে বঞ্চিত হবেন, কিন্তু তিনি তা কিছুতেই হতে দিতে চান না। কী করা যায়, কী করা যায় ! ভাবতে ভাবতে তিনি একটা বুদ্ধি বের করে ফেললেন। তারপর লম্বা ঘুম।

ঈদের দিন সকালে তার প্রিয় গাঁধাটিকে সাথে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে রওনা হলেন নাসিরুদ্দিন হোজ্জা। শ্বশুরবাড়ি তার খুব বেশি দূরে নয়। ঘন্টাখানেকের মধ্যেই তিনি শ্বশুরবাড়ি পৌঁছে গেলেন। শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছার কিছুদূর আগেই নাসিরুদ্দিন হোজ্জা তার গাঁধার পিঠ থেকে নামলেন এবং গাঁধাটিকে শ্বশুরবাড়ির দিকে মুখ করে তিনি নিজে গাঁধার পিঠে উল্টো হয়ে বসলেন। গাঁধাটি যেহেতু এর আগেও অনেকবার এই বাড়িতে এসেছে, তাই রাস্তা চিনে শ্বশুরবাড়ির দিকে নিজে নিজেই হেঁটে গেল।

শ্বশুরবাড়ির আঙিানায় ঢুকতেই হোজ্জা সাহেবের শালা-শালিরা এই দৃশ্য দেখে অবাক ! তারা সবাই হোজ্জাসহ গাঁধাটিকে ঘিরে দাঁড়ালো। আগের রাগ অভিমান, ঝগড়াঝাঁটি সব ভুলে তারা সবাই হোজ্জা সাহেবকে জিজ্ঞেস করল- দুলা ভাই, গাঁধার পিঠে উল্টো হয়ে বসে শ্বশুরবাড়ি আসার কারণ কী।

হোজ্জা তাদের সবার দিকে তাকিয়ে অবাক হওয়ার ভান ধরে বললেন- কী ব্যাপার এটা আমার শ্বশুরবাড়ি নাকি ! কীভাবে যে চলে আসলাম বুঝতেই পারছি না। আসলে আমি ঈদের নামাজ পড়তে গাঁধার পিঠে চড়ে বসে ছিলাম। সবসময় সামনের দিকেই মুখ করে বসি। আজ ভাবলাম একটু উল্টো হয়ে বসে দেখি গাঁধা আমাকে ঈদগাহ মাঠে নিয়ে যায় কিনা। কিন্তু গাঁধাতো গাঁধাই, ঘোড়া বা উট না। সে ভুল করে আমাকে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে এসেছে। সবাই বলল তাই নাকি দুলাভাই। হোজ্জা বলল-  হ্যাঁ, এটাই সত্যি। আমি যেহেতু উল্টো হয়ে বসে ছিলাম, তাই বুঝতে পারিনি যে সে আমাকে আমার শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে আসতেছে। বুজতে পারলে এবার আমি শ্বশুরবাড়িতে আসতাম না। কারণ তোমরাতো আমাকে দাওয়াত দাও নাই।

হোজ্জা সাহেবের কথা শুনে তার শালা-শালীরা হেসে উঠলো এবং তারা যে যা বোঝার তা বুঝে নিয়ে বলল- চলেন দুলাভাই, এসেই যখন পড়েছেন তখন আর রাগারাগির দরকার নাই। আসেন সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া করি। এই কথা শোনার সাথে সাথে হোজ্জা সাহেবও লাফ দিয়ে গাঁধা থেকে নেমে দাঁত কেলিয়ে হেসে বললেন- কী আর করা, তোমরা যখন এত করে বলছো, তাহলে পূর্বের রাগারাগি সব বাদ। চলো আমরা সবাই মিলে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করি।
------------
গল্প এখানেই শেষ। পরবর্তীতে হোজ্জা সাহেবের শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার এই নিনজা টেকনিকের খবর পুরো এলাকায় চাউর হয়ে যায়। তারপর থেকে যখনই কোনো স্বামী তার স্ত্রীর বিশ্বে ভারতবর্ষের ছড়িয়ে যায়। সেই মিথ থেকে এই ধরনের একটি চিত্রকর্ম আঁকা হয়। সেই চিত্র থেকেই আবার তৈরি হয় এই রকম একটি ভাস্কর্য। যা এবার আমাদরে দেশের ঈদ র‌্যালীতে সংযুক্ত করা হয়েছে। 

বি: দ্র: ছবিতে থাকা এই ভাস্কর্য নিয়ে আজ সারাদিন অনেকেই অনেক কথা বলাবলি করছেন। ভাস্কর্যটি নিয়ে কেউ কেউ রাজনীতির মসল্লা খুঁজছেন। কেউ কেউ এটার মধ্যে ধর্ম টেনে আনছেন। কেউ কারো কারো চেহারার সাথে ভাস্কর্যটির মিল খুঁজে বেড়াচ্ছেন। অনেকে আবার দেশের বর্তমান পরিস্থিতির সাথে তুলনা করে কবি শামসুর রাহমানের ভাষায় “অদ্ভুত গাঁধার (উটের) পিঠে চলছে স্বদেশ’ বলে হাস্যরস করছেন। আরে ভাই- সবকিছুর মধ্যেই দেশ, রাজনীতি বা ধর্ম টেনে আনা ঠিক না। মাঝে মাঝে বিনোদনও টেনে আনা উচিত। ঈদ একটি ধর্মীয় উৎসব হলেও এটি একটি আনন্দ-বিনোদনের উপলক্ষও। কাজেই এই ভাস্কর্যটিকে বিনোদন হিসেবেই নেওয়া উচিত। আমার এই লেখাটিও একটি বিনোদনমূলক লেখা মাত্র। ইতিহাসের সাথে এর কোনো সত্যতা নাই।

সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।

(রম্যগল্প : নাসিরুদ্দিন হোজ্জার শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার নিনজা টেকনিক)
মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ
৩১ মার্চ ২৫

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ