রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামের সৌভাগ্য তাঁরা এই যুগে জন্মাননি ।এই যুগে জন্মালে তিনি ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ হতে পারতেন, কিন্তু কবি রবীন্দ্রনাথ হতে পারতেন কি না সন্দেহ! তেমনি ভাবে নজরুল দুখু মিয়া হতেন, কবি নজরুল হতেন না। যদিওবা তাঁরা লেখালেখি করতেন তবে হয়ত আমরা সেই রবীন্দ্র-নজরুল পেতাম না; যা আমরা এখন পাচ্ছি।
প্রথমত: তাঁদের বেশিরভাগ সময় কাটতো বিভিন্ন মিটিং, মিছিল, সভা-সমাবেশ ও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিয়ে আর ছবি তুলে।
দ্বিতীয়ত : তাঁরা ব্যস্ত থাকতেন বিভিন্ন সংগঠন কর্তৃক পদক-পদবি অর্জন নিয়ে। দুই একটা ডক্টরেট ডিগ্রিও থাকত তাঁদের। তাঁদের ঘরে অসংখ্য বই না থেকে জাতীয় আন্তর্জাতিক নানা সংগঠনের ক্রেস্ট, সম্মাননা স্মারক ও পদক শোভা বর্ধন করত।
তৃতীয়ত: তাঁদের সারাদিন ব্যস্ত থাকতে হতো আমাদের মতো ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্ট দেয়া আর লাইক কমেন্ট গোনা নিয়ে। হয়ত বিভিন্ন জনের ফেসবুকে আইডিতে কমেন্ট যুদ্ধ করে বেড়াতেন তাঁরা
আমাদের মতো তাঁরা সারাদিন কোথায় কোথায় গেলেন, কী কী করলেন সেসব পোস্ট দিতেন।কবে কোথায় কাদের থেকে কী কী পদক আর কী কী সম্মাননা পেলেন সেসব পোস্ট দিতেন।আর এসব করে করে তাঁরা লেখালেখির পর্যাপ্ত সময় হতো না ।টুকটাক হয়ত লেখালেখি করতেন কিন্তু যুগের পর যুগ টিকে থাকবে এমন সাহিত্য রচনা করা সম্ভব হতো না।
শরৎচন্দ্র চট্টপধ্যায়, জীবনানন্দ দাশ, জসিম উদ্দিন, সুকুমার রায়, সুকান্ত, শামছুর রাহমান, অদ্বৈত মল্লবর্মণ তাঁরা সবাই ভাগ্যবান যে তাঁরা এনালগ যুগে জন্মগ্রহণ করেছেন। এই প্রযুক্তির যুগের জন্মালে তাঁরা হয়ত এটা সেটা করে স্বনামে বিখ্যাত হতেন। কিন্তু যে অসামান্য সৃষ্টিশীল কাজগুলো করে গেছেন, সে কাজগুলো হয়ত তাঁরা করতে পারতেন না।
আমাদের মতো অল্প কিছু সৃষ্টি করেই সেসব মহাসমারোহে প্রচারে ব্যস্ত হতেন । আর সেসব কর্ম নিয়ে বিভিন্ন সংগঠন/প্রতিষ্ঠানের পদ-পদবি অর্জন, দখল/অপসারণের তদবির করে বেড়াতেন হয়ত।আর ব্যক্তিগত সুযোগ সুবিধা অর্জনের চেষ্টাতো থাকতোই। সব মিলিয়ে তাঁদের নাম বিখ্যাত হলেও তাঁদের সৃষ্টি বিখ্যাত হতো না।
মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ
০৩ ডিসেম্বর ২৩
(নোট:
এই যুগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,
কাজী নজরুল ইসলাম নোবেল
প্রাইজ পেলে তাঁদের নিয়ে
কী আলোচনা/সমালোচনা হতো
বসে বসে তাই ভাবছি। কেনানা রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর ছিলেন ব্রিটিশ শাসন
কাঠামোর অংশীদার তথা জমিদার, আর
কাজী নজরুল ইসলাম এক
জীবনে ছিলেন ব্রিটিশ সৈনিক।
0 মন্তব্যসমূহ