এমন সময় সেখানে একজন ক্রেতার আগমন হলো।
নিজেদের গল্প গুজব ছেড়ে তারা দুইজন ব্যস্ত হয়ে পড়লো আগন্তুককে স্বাগত জানাতে। দুইজনই আলাদা আলাদাভাবে সেই ব্যক্তিকে নিজেদের দোকানে আহবান করতে লাগলো।
ক্রেতা বেচারা কোন দোকানে ঢুকবে এই ভেবে একটু ভ্যাঁপচেকা খেলো। একটি দোকানে ঢুকে; কি মনে করে আবার অন্যজনের দোকানে ঢুকলো।
দোকানদার ক্রেতাকে উদ্দেশ্য করে বলল- ভাই আপনি ওই দোকানে কেন ঢুকতে যাচ্ছিলেন, ওর দোকানের মালামাল তো একদম বাজে, সব দুই নম্বর মাল। আমাদের এখানে এক নম্বর পণ্য পাবেন, দামেও সস্তা।
দোকানদারের কথা শুনে ক্রেতা কিছুটা আশ্বস্ত হলো। যাক ভালো দোকানেই এসে পড়েছে। সে পছন্দমতো কিছু পণ্য কিনে নিলো।
যাওয়ার সময় দোকানদারকে উদ্দেশ্য করে বলল- আচ্ছা ভাই, কিছু মনে করবেন না, একটা কথা জিজ্ঞেস করি ?
দোকানদার বলল- কি বলবেন বলেন ?
ক্রেতা বলল- আমি যখন আপনাদের দোকানে দিকে আসছিলাম তখন দূর থেকে দেখলাম আপনারা দুজন খুব হাসি মজা করছেন, মনে হচ্ছিলো আপনাদের খুব মধুর সম্পর্ক। কিন্তু আপনাদের কাছে আসতেই আপনারা দুজনই আমাকে নিয়ে অনেকটা টানাটানি শুরু করেছেন। এখন আবার আপনি ওর বদনাম করছেন। বন্ধু হয়ে বন্ধুর বদনাম করা বা তার ব্যবসার ক্ষতি করা কি ঠিক ?
সব শুনে দোকানদার বলল, আরে ভাই বন্ধুত্ব, বন্ধুত্বের জায়গায় আর ব্যবসা ব্যবসার জায়গায়। ব্যবসার মধ্যে বন্ধুত্ব করলে ব্যবসা টিকবে না। কম্পিটিশনের ব্যবসা, বুঝতেই পারছেন।
ক্রেতা বলল- কিন্তু আপনি যে ওর পণ্যর বদনাম করছেন তা কি সত্যিই।
এবার বিক্রেতা একটু বিরক্ত হয়ে বলল- ভাই আপনিতো একুট বেশি কথা বলেন। সত্যিই না হলে কি আমি আপনাকে বলেছি। তাছাড়া এই দোকানের মাধ্যমে আমার ও আমার সংসার চলে। আমি যদি বন্ধুত্বের খাতিরে তাকে ছাড় দেই তাহলে আমার সংসার চলবে না।
ক্রেতা বললো- ও আচ্ছা, ঠিক আছে ভাই যাই। আবার দেখা হবে। এই বলে ক্রেতা চলে গেলো।
পুনচ : আমাদের আশা পাশে এমন কিছু মানুষ আছে, যাদের কাছে সম্পর্কটা হচ্ছে ব্যবসার মতো। সারাদিন একসঙ্গে থাকবে, খাবে, ঘুরবে, আড্ডা দিবে, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি চর্চা করবে, রাজনীতি করবে কিন্তু যখন সাথের একজনের ভালো একটা কাজের জায়গা তৈরি হবে তখন আর অন্যজনকে ছাড় দেবে না। একে অন্যের বদনাম করবে। কেননা এইটা দিয়ে তার নিজের সংসার চলে, তাই তারা অন্যজনকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেবে না।
দোকানদার
চলতি পথের গল্প-০৪
মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ
উত্তর পৈরতলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
১৯ মার্চ ২২
0 মন্তব্যসমূহ