পৃথিবীর বৃহৎ ক্ষমতাশালী দেশ আমেরিকা। জ্ঞান-বিজ্ঞানে, প্রযুক্তির ব্যবহার আর উন্নত জীবনযাপনের শীর্ষে থাকা এই আমেরিকা আজ অসহায়। ভয়াবহ দাবানলের আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ছে দেশটির ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের বিলাসবহুল লস অ্যাঞ্জেলেস শহর। সারা বিশ্বের মানুষ রঙিন পর্দায় বিস্ময়ের চোখে দেখছে আস্ত একটি আধুনিক শহর পুড়ে যাওয়ার দৃশ্য। হলিউডের মুভির চাইতেও বেশি ভয়ংকর হলিউডের শহর পুড়ে যাওয়ার সে দৃশ্য।
প্রকৃতির খেয়াল, নির্মমতা ও অথবা সৃষ্টিকর্তার বিচার- যে নামেই আখ্যায়িত করি না কেনো প্রাকৃতিক এই বিপর্যয়গুলো পুরোপুরি রোধ করা না গেলেও আমেরিকা চাইলে নিজ দেশ তো বটেই পৃথিবীর বহু দেশকেই নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে বের করে আনা বা বিপর্যয়ের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার সাধ্য রাখে।
পৃথিবীতে আরেকটু ভালো রাখা, মানুষ এবং মানবতাকে আরেকটু ভালো রাখার ক্ষমতা আমেরিকার আছে। কিন্তু সে ক্ষমতা তারা কতটুকু ব্যবহার করে ? যতটুকুই করুক; তার চেয়ে বেশি করে পৃথিবীব্যাপী তার মোড়লিপনা টিকিয়ে রাখতে যুদ্ধ-সংঘাত ও রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টিতে।
আজ আমেরিকার এই বিপর্যয় দেখে; সেখানে বসবাস করি মানুষের হাহাকার দেখে, পশুপাখির নির্মম মৃত্যু দেখে; সাজানো গোছানো একটি শহর ধ্বংস হতে দেখে মানবিক কারণে আমরা হয়ত খুশি নাও হতে পারি। কিন্তু জাপান, ভিয়েতনাম, ইরাক, আফগানিস্তান আর সিরিয়া, ফিলিস্তিনের মতো দেশগুলো যদি আজ আমেরিকার বিপর্যয়ে খুশি হয়ে ইদ উদ্যাপন করে, তাতে আমাদের অবাক হওয়ার কিছুই নেই। ফেসবুকে একটি বাক্য ভেসে বেড়াচ্ছে- ‘ফিলিস্তিন পোড়াতে লক্ষ লক্ষ বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার করলেও নিজ দেশের একটি শহর পুড়ে যাচ্ছে সম্পূর্ণ বিনা খরচে’ কথাটি যে একদম মিথ্যে নয়।
আমেরিকা বিশ্বব্যাপী তার মোড়লিপনা না দেখিয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানে, মানব সেবায় আরো বেশি ভূমিকা রাখলে পৃথিবীর বহু দেশে শান্তি ফিরে আসতো। বহু দেশের মানুষ উন্নত জীবন পেত। পেত খাদ্য, চিকিৎসা, বস্ত্র বা বাসস্থানের মতো মৌলিক চাহিদা পূরণের নিশ্চয়তা। নিজ দেশের প্রতিরক্ষা আর ভিন্ন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠান নামে তাদের যুদ্ধ ব্যয়, তা দিয়ে অনায়সে পৃথিবীর তাবৎ মানুষের অনেক কল্যাণ সাধন করা যায়।
খবরে জেনেছি ওই শহরে এপ্রিল থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় শুষ্ক আবহাওয়া থেকে এই আগুনের সূত্রপাত। দুবাইয়ের মতো মরুভূমির শহর যেখানে ‘ক্লাউড সিডিং’ করে কৃত্রিম বৃষ্টি তৈরি করতে পারে, আমেরিকার জন্য তো এটি কোনো কঠিন বিষয় ছিল না। গত ৮ মাস ধরে বৃষ্টি না হওয়ার শহরে, সর্ব আধুনিক প্রযুক্তির দেশ আমেরিকা কেনো এতোদিন কৃত্রিম বৃষ্টির ব্যবস্থা করল না- তা ভেবে অবাক হই। সম্ভবত পৃথিবীর আর কোন কোন দেশে আরও ঝামেলা পাকানো যায়- এসব চিন্তা ফিকিরে ব্যস্ত থাকা মার্কিন কর্তৃপক্ষ নিজ দেশের আসু বিপদ সম্পর্কে উদাসীন ছিল।
অ্যাঞ্জেলেস এর আগুন নিভে যাক, বিশ্বব্যাপী আগুন আগুন খেলা বন্ধ করে আমেরিকা তার নিজ দেশের প্রতি আরো মনোযোগী হোক। তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। মানবতার জয় হোক, জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার ঘটুক- এই কামনা করি।
মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ
লেখক-সংগঠক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
১২ জানুয়ারি ২৫
(পুনশ্চ: এই লেখাটিসহ সাহিত্যধর্মী আমার সকল লেখা ব্লগেও পড়া যাবে। লিংক কমেন্ট সেকশনে দেওয়া হল। ব্লগে থাকা সার্চ বাটনে যেকোনো একটি শব্দ লিখেও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আমার পুরনো লেখাগুলো পড়তে পারবেন। নিজ নামে আমার একটি ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলও রয়েছে। কোনো লেখা পড়ে ভালো বা মন্দ মন্তব্য আমি খুব সহজভাবে গ্রহণ করি। আপনার মূল্যবান মন্তব্য আমার লেখার উৎকর্ষ সাধনে ভূমিকা রাখবে। আমার কোনো লেখা পড়ে আপনার ভালো লাগলে ইচ্ছে হলে আপনি আমাকে শুভেচ্ছা উপহার পাঠাতে পারেন। সেটি হতে পারে নতুন বা পুরাতন বই, কলম বা ডায়েরি অথবা অন্য কিছু। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।)
0 মন্তব্যসমূহ