শুধু টাকা পয়সা থাকাই মানুষের প্রকৃত যোগ্যতা নয়

আপনার কাছে অনেক টাকা থাকলে আপনি তা দিয়ে মানবসেবা মূলক কিছু কাজ করতে পারেন। রাস্তা, ব্রিজ নির্মাণ করা, গাছ লাগানো, পুকুর কাটা, ঘাটলা বানাতে পারেন। সমাজের অসহায় মানুষদেরকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র প্রদান করে অথবা সরাসরি আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে পারেন।

টাকা থাকলে তা দিয়ে আপনি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল অথবা অন্য কোনো সেবামূলক প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে পারেন। সেখানে যোগ্য লোকদের চাকির ব্যবস্থা করতে পারেন।

আপনার যদি সেবামূলক মনোভাব না থাকে, তাহলে টাকা দিয়ে আপনি সুন্দর একটি বাড়ি তৈরি করতে পারেন এবং সেই বাড়িতে লোকজনকে মাঝে মাঝে দাওয়াত দিয়ে খাইয়ে আপনার সুন্দর বাড়িটা দেখাতে পারেন। চমৎকার একটি বাগানবাড়ি অথবা রিসোর্ট করে সেখানে ভ্রমণ পিয়াসু মানুষের বিনোদনের ব্যবস্থা করতে পারেন।

টাকা থাকলে আপনি দেশবিদেশের চমৎকার সব দর্শনীয় স্থানে ঘুরে বেড়াতে পারেন। সেসব স্থানের ছবি, ভিডিও তৈরি করে আমাদেরকে দেখাতে পারেন, আমাদের যাদের টাকা নেই আপনাদের ছবি-ভিডিওতে দেখে দেখে সেখান থেকে সৌন্দর্য এবং জ্ঞান আহরণ করতে পারবো।

আপনার কাছে অনেক টাকা থাকলে আপনি তা দিয়ে নতুন নতুন কল কারখানা তৈরি করতে পারেন, যেখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। এতে আপনারও টাকা-পয়সা আরো বেশি বৃদ্ধি পাবে।

কিন্তু আপনার টাকা আছেই বলে আপনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হতে চাইবেন কেনো ? টাকার জোরে আপনি কেনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সভাপতি/সম্পাদক হবেন ? টাকার দিয়ে আপনি কেনো জনপ্রতিনিধিত চাইবেন ?

এসব করতে গেলে যে জ্ঞান/যোগ্যতার প্রয়োজন হয় তাতো আপনার নাই, আপনার টাকার জোরে আপনি কেনো যোগ্যদের জায়গাটা দখল করতে চাইবেন ? টাকা আছে বলেই যাচ্ছে তাই লিখে আপনি কেন বই বের করবেন, বুদ্ধিজীবী সাজতে যাবেন- এগুলো কি এতো সোজা !

কেউ দরিদ্রতাকে জয় করে গ্রাম বা মফস্বলের স্কুল কলজে পড়ে, কেউ অনেক বছর নামিদামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে, অনেক বইপত্র পড়ে, জ্ঞান অর্জন করে একটি জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নিজেকে তৈরি করেন, আর আপনি হঠাৎ করে কোত্থেকে এসে টাকার পাওয়ারে সেই যোগ্য লোকের জায়গাটি ছিনিয়ে নেন ! কোনো ?

কেউ বছরের পর বছর মাঠে ময়দানে, রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করে, নিজেকে নেতা হিসেবে তৈরি করেন। সাধারণ মানুষের সাথে মিশে মানুষের সুখ-দুঃখের সাথী হন। প্রতিপক্ষের সাথে লড়াই-সংগ্রাম করে মামলা-মোকদ্দমা ফেস করে, অসংখ্য ত্যাগ স্বীকার করে নিজেকে একজন খাঁটি নেতা হিসেবে তৈরি করেন। আর আপনি সারা জীবন বৈধ বা অবৈধ উপায়ে টাকা উপার্জন করে সেই টাকা দিয়ে ত্যাগী নেতার জায়গাটি টাকার বিনিময়ে ছিনিয়ে নেন !  কেনো ?

আপনার ধর্মীয় জ্ঞান নেই, ব্যক্তিগত জীবনে ধর্ম চর্চা করেন না, হালাল-হারাম বেছে চলেন না, অথচ টাকার গরমে মসজিদে সামনের কাতার দখল করেন, সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের পদ দখল করে বসে থাকেন ! কেনো ?

আপনার সাহিত্য প্রতিভা নেই, সাংস্কৃতিক চর্চা নেই, শৈল্পিক প্রতিভা নেই   অথচ ভাবসাবে আপনি বহুত বড় লেখক, সাহিত্য-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ! প্রতিভা ছাড়া- পরিশ্রম ছাড়া শুধু টাকার প্রভাবে নিজের নাম ছাড়াতে ব্যস্ত থাকেন, কেনো ?

আপনার কাছে বেশি টাকা থাকলে আপনি টাকাকে বিছানা-বালিশ বানান, লেপ-তোশক বানান, ঘরের পর্দা-পাপোশ বানান, এমনকি টাকাকে বাতরুমের টিসু বানিয়ে আপনার পশ্চাৎদেশ পরিষ্কার করুন। তাতে সমাজের কোনো ক্ষতি হবে না, কিন্তু শুধু টাকার জোরে জ্ঞানহীন, যোগ্যতাহীন, পরিশ্রমহীন, ত্যাগহীন মানুষ কোনো সম্মানজনক জায়গায়, দায়িত্বশীল চেয়ারে বসলে এর ক্ষতিটা হয় সবার,  টাকা আছে বলেই আপনি কেনো দেশের, দশের, সমাজের ক্ষতি করতে যাবেন ?

আর হ্যাঁ, টাকা পয়সার সাথে যদি আপনার প্রতিভা-যোগ্যতা থাকে,  পরিশ্রম ও ত্যাগ থাকে তাহলে ভিন্ন কথা। কিন্তু শুধু টাকা পয়সা থাকাই মানুষের প্রকৃত যোগ্যতা নয়।

মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ

২৪ মে ২৪