ছোটবেলায়
‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’এই জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় এই জাতীয় সংগীতের
রচয়িতা কে, তার ধর্ম কি, তিনি কোন দেশের, কোন ভাষার, কোন প্রেক্ষাপটে জাতীয় সংগীত
লিখেছেন, এর সুর আসল না নকল এগুলো জানতাম না । এসব না জেনেই জাতীয় সংসদ গাওয়া বা
শোনার সময় চোখের সামনে যে দৃশ্যগুলো ফুঁটে ওঠে তা আমার চিরচেনা জন্মভূমি, প্রতিদিনের
দেখা বাংলাদেশ। এর ভিতর শিরক-বিদআত, হালাল হারাম আছে কি না সে সব তখন মাথায় বা মনে
আসেনি। যেটা আসে সেটা সম্ভবত দেশপ্রেম।
বড় হয়েও আমার সেই অনুভূতির কোনো পরিবর্তন নেই। তাইতো আজও কোনো রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় কোনো বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জাতীয় সংগীত গাইতে দেখলে একটুর জন্যও হলেও থমকে দাঁড়াই। অদ্ভুত এক ভালো লাগা কাজ করে। কোনো অনুষ্ঠান বা সোশ্যাল মিডিয়াতেও জাতীয় সংগীতের সুর শুনলে হৃদয়ে দেশপ্রেম ভিতর নাড়া দিয়ে ওঠে। যদিও সত্যিকার অর্থে আমি বা আমাদের অনেকেই সত্যিকার অর্থে দেশপ্রেমিক নই। কিন্তু ওই মুহূর্তে ঠিক কেমন করে যেন কিছু সময়ের জন্য আমরা দেশপ্রেমিক হয়ে উঠি।
বর্তমান জাতীয় সংগীতের বিপক্ষে যারা বিভিন্ন যুক্তি দিচ্ছেন- তাদের অনেকের যুক্তি একদম ফেলনা নয়। তাদের এসব যুক্তি মেনে নিয়েই বলছি- আপনাদের মতো আমরাও যদি জাতীয় সংগীতের আদি-অন্তর খোঁজ করতে যেতাম তাহলে হয়ত আমাদেরও এই জাতীয় সংগীতটি আপনাদের মতোই ভালো লাগতো না। ভুল করে হলেও একবার যেহেতু ভালোবেসে ফেলেছি, তাই এই জাতীয় সংগীতকে আর কোনোদিন ভুলতে পারবো না। হয়ত কোনোদিন এটি পরিবর্তন হয়েও যেতে পারে। কিন্তু ছেলেবেলায় ফেলে আসা অনেক স্মৃতির প্রতি আমাদের যেমন এক অস্বাভাবিক মায়া, টান এবং ভালোলাগা অনুভব করি, ঠিক তেমনি কিংবা তার চাইতেও বেশি ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’এই গানটির প্রতি মায়া এবং টান অনুভব করব।
যারা বর্তমান জাতীয় সংগীতের পক্ষে বলছেন তারা তো বলছেনই, যারা পরিবর্তন করতে চাইছেন তাদের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলতে চাই- বিতর্কের মুখে জাতীয় সংগীত পরিবর্তন করা হয়ত অসম্ভব কিছু নয়। কিন্তু তার পরিবর্তে আরেকটি সংগীতকে জাতীয় সংগীত হিসেবে নির্বাচন করা আমাদের পক্ষে বিরাট অসম্ভব একটি কাজ হয়ে দাঁড়াবে। কেননা জাতিতে আমরা এক হলেও- মতবাদে আমরা বহু মতাদর্শে বিশ্বাসী।
সবকিছুতেই নেগেটিভিটি খুঁজে বের করা এবং তার বিপক্ষে বিভিন্ন যুক্তি দাড় করিয়ে অনড় অবস্থানে থাকা আমাদের মজ্জাগত অভ্যাস। ফলে কেউ অন্য কোনো একটি সংগীতকে জাতীয় সংগীতের প্রস্তাব করলে সেটির বিপক্ষে হাজার জন হাজার যুক্তি উপস্থান করবে। আবার লাখ লাখ মানুষ নিজের পছন্দের, নিজের ধর্মের, নিজের দলের লোকের লেখা অথবা নিজের ভালোলাগার একটি গানকে জাতীয় সংগীত করার প্রস্তাব করবে। ফলে জাতীয় সংগীত নিয়ে বিতর্ক তখনও পিছু ছাড়বে না।এমনকি নির্দিষ্ট একটি বেছে নেওয়াও সম্ভব হবে না।
তাই আমার মনে হয়- বিতর্ক ভুলে যা আছে আপাতত তাই থাকুক। আমাদের নিজের দৈনন্দিন ব্যবহার করা কত কিছুইতো কোন ধর্মের লোক বানিয়েছে, কোন দেশের লোক বানিয়েছে, কোন প্রেক্ষাপটে বানিয়েছে এসব না জেনেই ব্যবহার নিয়মিত ব্যবহার করতে থাকি। তাহলে জাতীয় সংগীত নিয়ে শুধু শুধু বিতর্ক কেন ?
ঘৃণা ভুলে, ভালোবাসে একবার ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ সংগীতটি পড়ুন অথবা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। একবার লোক চক্ষুর আড়ালে হলেও জাতীয় সংগীত গেয়ে উঠুন। অন্তত্ব একবার সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গেয়ে দেখুন, আপনার কাছেও অবশ্যই ভালো লাগবে।
মনিরুল
ইসলাম শ্রাবণ
৬
সেপ্টেম্বর ২৪
ব্রাহ্মণবাড়িয়া
0 মন্তব্যসমূহ