রাত, দিন নাই যখন তখন ছবি আঁকতে বসে যায়। জলরং কিনে দেই না বলে পেন্সিল রং যেগুলো আঁকতে আঁকতে ছোট হয়ে গেছে সেগুলোকে ছোট ছোট নানা পাত্রে ঘণ্টাখানেক ভিজিয়ে রেখে জলরং বানায়। তারপরে কটন দিয়ে তুলি বানিয়ে ছবি আঁকে। এক রঙের সঙ্গে আরেক রং মিশিয়ে ভিন্ন আরেকটি কালার তৈরি করে।
তখন ওর বয়স তখন দুই কি আড়াই হবে। আমরা আগে যে বাসায় থাকতাম, সে বাসায় দেয়ালের বিভিন্ন জায়গায় নিজের হাতের ছাপ এঁকে এসেছে। ওর বাড়িওয়ালী নানু এখনো সে দেয়াল রং করেনি, অন্য ভাড়াটিয়ারাও ওর হাতের ছাপগুলো মুছেনি। সে মাঝে মাঝে সেই বাসায় গিয়ে নানুর সাথে দেখা করে আসে। আর আমাদের থাকার রুমগুলোতে নিজের আঁকা ছবিগুলো দেখে আসে। ছাদে লাগানো ফুল গাছগুলোও দেখতে যায়, যদিও সেগুলো মরে গেছে।
তাকে বলি- তোমার যেহেতু এত ছবি আঁকার শখ, তাহলে তোমাকে ছবি আঁকার স্কুলে ভর্তি করে দেই। তো এক বছর যাবত বলেই যাচ্ছি, কিন্তু সে ছবি আঁকার স্কুলে ভর্তি হতে রাজি নয়। তার ধারণা ছবি আঁকার স্কুলে তাকে তার নিজের মত ছবি আঁকতে দেবে না। তাছাড়া সে ভাবে সেখানে অনেক পড়া দিবে। দুই স্কুলের পড়া সে কমপ্লিট করতে পারবে না। তাই সে শর্ত দিয়েছে ছবি আঁকার স্কুলে ভর্তি হলে বর্তমান স্কুলে যাবে না। এজন্য আর্ট স্কুলে তাকে ভর্তি করাবো কারাবো বলে ভর্তি করা হয় না।
ঘরে নিয়মিত ছবি এঁকে যাচ্ছে সে। বছরখানেক আগে বায়না ধরে ওর ছবি প্রিন্ট করে ফ্রেমে বাঁধাই করে দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। বাচ্চাদের ছবি নাকি এভাবেই ঘরে ঝুলিয়ে রাখতে হয়। প্রিন্ট, ফ্রেম, বাঁধাই শব্দগুলো জানে না বলে আমাকে এটা সেটা বলে বুঝিয়েছে। আমি বুঝতে পেরে ওর আঁকা দুটি ভালো ছবি বাঁধাই করে দেয়ালে ঝুলিয়ে রেখেছি, সেটা দেখে ওর কি খুশি।
কিছুদিন আগে আবার বায়না ধরেছে শুধু একটা ছবি দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখলে হবে না। অনেকগুলো ছবি সারা ঘরে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। ওর আবদার রক্ষা করতে ওর প্রায় ২৫টি ছবি আঁকার খাতা থেকে বাছাই করে এই ৩২ টি ছবি আলাদা করি। এতগুলো ছবি বাঁধাই করা সম্ভব নয় বলে ডিজিটাল ব্যানারে প্রিন্ট করে আমার লাইব্রেরি রুমে লাগিয়েছি। এটা দেখে সে খুব খুশি হয়েছে।
কিচিরমিচিরে ছবি আঁকা বিভাগে তিনজন খুদে আঁকিয়ে ছবি প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে একটি আছে তাসফিয়ার আঁকা ছবি। এই জন্য কিচিরমিচির নাকি তার নিজের বই। বাসায় কোনো মেহমান আসলে কিচিরমিচির খুলে নিজের আঁকা ছবি দেখায়। বন্ধুদের সাথে শিশুসুলভ আনন্দ প্রকাশ করে।
ছোটবেলায় আমারও ছবি আঁকার শখ ছিল। পেন্সিল আর সাইনপেন দিয়ে পতাকা, পাখি, শাপলা, জবা, সূর্যমুখী, আম, আনারস, মই, বালতি, নৌকা, জাহাজ আর গ্রামের দৃশ্যের ছবিসহ এটা-সেটা আঁকতাম। মেয়ের আঁকাআঁকি দেখে মাঝে মাঝে ছোটবেলায় ফিরে যেতে ইচ্ছে করে, সেটা তো আর সম্ভব নয়। তবে আশা রাখি একদিন মেয়ের আঁকা ছবি দিয়ে নিজের বইয়ের প্রচ্ছদ করব।
তাসফিয়ার জন্য সবাই দোয়া করবেন। সকল শিশুদের জন্যও রইল শুভ কামনা।ছবির মত রঙিন হোক সকল শিশুর জীবন।
মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ
১০ জানুয়ারি ২৪
0 মন্তব্যসমূহ