Ticker

6/recent/ticker-posts

আমার প্রিয় লেখক

আমার প্রিয় লেখক

বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী কথাসাহিত্যিক আমির হোসেন

মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ


 উপক্রমণিকা

এই লেখাটি যখন লিখতে বসি তখন পৃথিবীতে ৮০০ কোটিতম শিশুটি জন্মগ্রহণ করেছে। আপনি যখন এই লেখাটি পড়বেন বিশ্বের জনসংখ্যা তখন আরো অনেক বেশি হবে। প্রকৃতির নিয়মে এই ৮০০ কোটি মানুষই একদিন মৃত্যুবরণ করবেন। এই মানুষগুলোকে তার পরিবারের কয়েকটি প্রজন্ম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। কিছু কিছু মানুষকে স্মরণের মেয়াদ হবে ২০ থেকে ৫০ বছর, কেউবা ১০০ বছর। আবার এমন কিছু মহৎ ব্যক্তি আছেন যারা পরিবারের বাহিরে গিয়েও হাজার বছর পৃথিবীর তাবৎ মানুষের কাছে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। কোন মানুষের জীবদ্দশায় তার কর্ম ও উদ্দেশ্য যত মহৎ, চেষ্টা ও সাধনা যত কঠোর, মেধা যত প্রখর, চিন্তাশক্তি যত দূরদৃষ্টি সম্পন্ন তিনি ততকাল পৃথিবীর বুকে স্মরণীয় হয়ে ও অমর হয়ে থাকবেন। কোন মানুষকে তার মৃত্যুর পর অন্যান্য মানুষ যতগুলো কাজের জন্য চিরস্মরণীয় করে রাখে তার মধ্যে অন্যতম হলো তাঁর সাহিত্য প্রতিভা ও সাহিত্য সৃষ্টি। এই জন্যই কোন কবি বা সাহিত্যিকের নামের আগে মরহুম বা প্রয়াত লিখা হয় না। কেননা লেখকগণ তাঁর নানান সৃষ্টির মাঝে চির অমর হয়ে থাকেন।


রত্নগর্ভা ব্রাহ্মণবাড়িয়া

প্রাকৃতিক লীলাভূমির অপার রূপ-বৈচিত্র্যের দেশ বাংলাদেশ। সুজলা, সুফলা, শস্য-শ্যামলা এই দেশে হাটে-মাঠে-ঘাটে সুর আর সাহিত্যের অযুত উপাদান নিত্য খেলা করে। আর তাই এই দেশে জন্ম নিয়েছেন অসংখ্য কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী ও সাধক। বাংলদেশের রত্নগর্ভা জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও কালে-কালে, যুগে-যুগে জন্ম নিয়েছে অসংখ্য গুণি মানুষ। শিক্ষায়, সাহিত্যে, সংস্কৃতিতে, রাজনীতি বা অর্থনীতিতে এই জেলার মানুষ সমৃদ্ধ করেছে পুরো দেশকে। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে এনে দিয়েছে আলাদা পরিচিতি ও সুখ্যাতি। প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত এতো এতো গুণি মানুষের জন্ম দিয়েও এর উর্বরাশক্তি এতটুকু কমেনি আজো। আর তাইতো এখনো এর কৃতিসন্তানেরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুনাম ও সুখ্যাতি বয়ে চলছেন বিশ্বজুড়ে। মেঘনাকন্যা তিতাস পরিবেষ্টিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ৯টি উপজেলায় বিভক্ত। এর মধ্যে নবীনগর উপজেলাটি যেন একটু বেশি সমাদৃত অসংখ্য গুণি মানুষের জন্মস্থান হিসেবে। মেঘনা-তিতাস ও পাগলা নদীর জলস্নানে উর্বরা নবীনগর ধন্য হয়েছে জ্ঞানী-গুণিদের পীঠস্থান হিসেবে। কথাসাহিত্যিক আমির হোসেন এই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলারই একজন কৃতিসন্তান।

জন্ম ও শিক্ষা

বর্তমান সময়ের দুই বাংলার জনপ্রিয় কবি ও কথাসাহিত্যিক আমির হোসেন নবীনগর উপজেলার গৌরনগর গ্রামে ১৯৭৩ সালের ৫ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর গর্বিত পিতার নাম মো. সুরুজ মিয়া ও রত্নগর্ভা মাতা নাম গুলবরের নেছা। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষায় হাতেখড়ি নিয়ে তিনি স্থানীয় কৃষ্ণনগর আব্দুল জব্বার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৯৬ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে অনার্সসহ এমএসসি ডিগ্রি অর্জন ও পরবর্তীতে তিনি ২০০৩ সালে বিএড ও ২০১৫ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।


সাহিত্য-সৌরভ

কথাসাহিত্যিক আমির হোসেন একজন বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী, গুণি মানুষ। তিনি একাধারে একজন  কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছড়াকার, গবেষক, আলোচক ও সংগঠক। কবিতা, উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ, গবেষণা, ছড়া সম্পাদনাসহ বহু গ্রন্থের প্রণেতা এই লেখক নিয়মিত লেখে যাচ্ছেন দেশ ও দেশের বাইরের অসংখ্য জাতীয় দৈনিকের সাহিত্যের পাতা, শীর্ষস্থানীয় সাহিত্যের ছোট কাগজ বা লিটল ম্যাগ, সাহিত্য সংকলন ও বিভিন্ন ম্যাগাজিনে। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি লেখালেখিকে জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেন। এই মহান ব্রত পালনে নিজের সমস্ত মেধা ও শ্রম ব্যয়ে তিন দশকেরও বেশি সময় সাহিত্য সাধনায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। সাহিত্য সৃষ্টি, সম্পাদনা, প্রগতিশীল আন্দোলন, পাঠাগার আন্দোলনসহ নানামুখী সাংগঠনিক তৎপরতার ফলে তিনি দেশ-বিদেশের মানুষদের কাছ থেকে কুড়িয়েছেন প্রশংসা, পেয়েছেন সম্মান। দেশি-বিদেশী নানা প্রতিষ্ঠান-সংগঠন তাঁর ঝুলি ভরিয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার, পদক ও সম্মাননায়। এপর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ত্রিশেরও অধিক। দেশ বিদেশের শতাধিক সংকলনে তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে। 



তাঁর শৈশব ও কৈশোর কাটে মেঘনা-তিতাস-পাগলি নদী বেষ্টিত নিজ গ্রামে। এই নদীর জলস্নানেই ধন্য এবং গ্রামীণ জনপদে বেড়ে উঠা এ লেখকের গল্প, উপন্যাস ও অন্যান্য লেখায় তাই আমরা খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ তথা শ্রমজীবী প্রান্তিক মানুষের দেখা পাই। খাল-বিল, নদী-নালা, ফুল-পাখি ও প্রকৃতির বিভিন্ন অনুষঙ্গ তাঁর লেখায় শৈল্পিকভাবে মূর্ত হতে দেখি। মূর্ত হতে দেখি বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতির বিচিত্রসব চিত্রাবলী। বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্য, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিষয়কে তিনি তাঁর বহু লেখায় শ্রদ্ধার সঙ্গে তুলে ধরেছেন। মানুষের চেয়ে বড় কিছু নেই, নেই কিছু মহিয়ান-এ কথা তিনি মনে প্রাণে বিশ^াস করেন এবং তাঁর চেতনায় ধারণ করেন। মানুষের জীবনকে কেউ কেউ তুলনা করেন নদীর সাথে। কারণ নদী বহমান, জীবনও বহমান। আবার কেউ কেউ তুলনা করেন বৃক্ষের সাথে। কারণ বৃক্ষও মাথা উঁচু করে নিজের জীবনকে পূর্ণতা দেন ফুলে ফলে মঞ্জুরিত-বিকশিত করে। তাই তাঁর কাছে নদীর মতো বৃক্ষও অনুকরণীয় অনুষঙ্গ। তিনি তাঁর যাপিত জীবনের পাঠের জন্য বৃক্ষের কাছে চির ঋণি বলে মনে করে। তাই ইতোমধ্যে তিনি সর্বমহলে পরিচিতি পেয়েছেন বৃক্ষপূরাণের কবি হিসেবে। তাঁর ভাষায়- 

‘বৃক্ষের কাছে আমি ধর্ম নিরপেক্ষতা শিখি
বৃক্ষপূরাণ পাঠেই আমি মানুষ হয়ে বাঁচি।’


তাঁকে যেমন দেখেছি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যে কয়েকজন গুণি মানুষকে আমার কাছ থেকে জানার ও মেশার সুযোগ হয়েছে। যাঁদের সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম কথাসাহিত্যিক আমির হোসেন স্যার। স্যারের যে বিষয়টি আমাকে গভীরভাবে আন্দোলিত করে তাহচ্ছে স্যারের ‘আন্তরিকতা’ ও ‘হাসিখুশি স্বভাব’। স্যারের সাথে দেখা হলেই চমৎকার একটি হাসি উপহার দেন। একেবারেই সাদামাটা হাসি, যাতে মন ভোলানো কোন ছোঁয়া নেই, নেই কোন জাদুকরি স্পর্শ। সে হাসিতে কোন কৃত্তিমতা নেই। সেই হাসিতে মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখা সাধারণ ভাবটি প্রকাশিত হয়ে যায়। তিনি মানুষকে কাছে টানতে পারেন দারুণভাবে। নানা পেশার, বয়সের, ধর্মের পার্থক্যের দেয়াল নিমিষেই ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায় তাঁর ব্যক্তিত্বের কাছে। সবার সাথে মিশে যেতে পারেন সহজে। তিনি যেমন সবাইকে আপন ভাবেন, তেমনি অন্যরাও তাকে সহজভাবেই নিতে পারেন। চারিদিকে এত ‘ক্রিটিক্যাল গুণি’ মানুষের ভিড়ে, তিনি সত্যিই অসাধারণ একজন মানুষ। যাঁকে কাছ থেকে না দেখলে বোঝা যায় না।  


একজন ব্রাহ্মণবাড়িয়া অন্তপ্রাণ মানুষ

তিনি জন্মভূমি ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে ভালোবাসেন মনপ্রাণে। তাইতো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সবকিছু তাঁর কাছে অতি আপন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষ, রাস্তা-ঘাট, আলো-বাতাস, নদী-খাল, গাছ-পালা, পশু-পাখি তাঁর কাছে অতি আপন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সবকিছুকে ভালোবেসে নিজের জীবনের বেশিরভাগ অংশ কাটিয়ে দিলেন  এখানেই। আর নিজের লেখায় ফুঁটিয়ে তোলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইতিহাস-ঐতিহ্য, জীবন-জীবিকা, প্রাণ-প্রকৃতি। আর সেবব লেখা ছড়িয়ে দেন দেশ-বিদেশের নানান পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে। নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা বা সাহিত্যিক প্রতিভা দিয়ে তিনি ইচ্ছে করলে সরকারি-বেসরকারি ভালো কোন প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হয়ে আরো আরামদায়ক জীবন বেছে নিতে পারতেন। এতো গুণ, যোগ্যতা, পরিচিতি থাকার পরও তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে থাকেন শুধুমাত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে ভালোবাসেন বলেন।


তিনি বহুামাত্রিক প্রতিভার অধিকারী

কথাসাহিত্যিক আমির হোসেন স্যার একজন বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী গুণি মানুষ। তিনি একাধারে একজন  কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছড়াকার ও সংগঠক। কবিতা, উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ, গবেষণা, সম্পাদনাসহ বহু গ্রন্থের প্রণেতা এই লেখক নিয়মিত লেখে যাচ্ছেন দেশ ও দেশের বাইরের অসংখ্য জাতীয় দৈনিকের সাহিত্যের পাতা, শীর্ষস্থানীয় সাহিত্যের ছোট কাগজ বা লিটলম্যাগ, সাহিত্য সংকলন ও বিভিন্ন ম্যাগাজিনে। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী এ কবি, কথাসাহিত্যিক ও গবেষক শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের টি. কিউ. আই-সেপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আই. ই. আর. এর আওতায় সি. পি. ডি. প্রশিক্ষণের একজন মাস্টার ট্রেইনার (গণিত) হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি এশিয়াটিক সোসাইটি ঢাকা এর নিয়োগকৃত গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পাঠাগার আন্দোলনে যুক্ত এ লেখক নির্ভৃত অঞ্চলে প্রতিষ্ঠাতা করেছেন ‘চেতনায় স্বদেশ’ নামে একটি গণগ্রন্থাগার। কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ তিনি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান থেকে অসংখ্য পদক ও সম্মাননা পেয়েছেন। যার মধ্যে, ‘বঙ্গমৈত্রী’, ‘বঙ্গবন্ধু পদক’, ‘নজরুল সাহিত্য পদক’, ‘ইন্দিরা গান্ধী পদক’ ও জ্ঞান তাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এ্যাওয়ার্ড অন্যতম।


                কবির কলমের কার্যক্রমে আমির হোসেন স্যার

ব্যক্তিগতভাবে স্যারের সাথে যোগাযোগের আগে আমি তাঁকে দেখেছি জেলার বিভিন্ন সাহিত্য-সংস্কৃতির অনুষ্ঠানে। সেসব অনুষ্ঠানে তিনি সিনিয়র কবি হিসেবে অংশগ্রহণ করতেন। যার কোন কোনটাতে তরুণ সাহিত্য-সংস্কৃতিকর্মী হিসেবে আমিও কবিতা পাঠের সুযোগ পেতাম। ধীরে ধীরে স্যারের সাথে একটু একটু পরিচয় হতে থাকে। এর মধ্যে কবি হুমায়ূন আমির স্যারের সাথে নিজের যোগাযোগ ও সখ্যতা বৃদ্ধি করে। ধীরে ধীরে তিনি আমাদের প্রতিষ্ঠিত ‘কবির কলম’ সংগঠনের কার্যক্রমে যুক্ত হোন। একসময় এর উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দীর্ঘ একটা বিরতির পর ‘কবির কলম’ পুনরায় যখন দ্বিতীয়বারের মত কার্যক্রম শুরু করে তখন থেকে আমির হোসেন স্যারের সাথে আমাদের যোগাযোগটা আরো কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। বৃদ্ধি পায় কবির কলমের কার্যক্রমও। এসময় তিনি ‘কবির কলমের’ প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। স্যারের পরামর্শ ও সহযোগিতায় কবির কলম গত চার বছরে অনেক গুলো ছোট-বড় অনুষ্ঠান, বই ও স্মরণিকা প্রকাশ করে। কবির কলমের কার্যক্রম জেলা থেকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে যায়। এসময় আমি তিন বছর কবির কলমের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও একবছর সভাপতির দায়িত্ব পালন করি।


লেখক ও পাঠক সৃষ্টিতে আমির হোসেন স্যার

আমির হোসেন স্যার শুধু একজন লেখকই নয়, একজন ভালো পাঠক ও আলোচক। সেইসঙ্গে নতুন পাঠক ও লেখক তৈরি করার অন্যতম কারিগর। বেশ কিছু নতুন লেখকের বই প্রকাশের ক্ষেত্রে তিনি পর্দার আড়াল থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। যার প্রমাণ আমার প্রথম প্রকাশিত বই “রাজকুমার ও তোতা পাখির গল্প”  প্রকাশ পাওয়া। ছোটদের গল্পগ্রন্থ “রাজকুমার ও তোতা পাখির গল্প” বইটি প্রকাশে আমার কম্পিউটারের কিবোর্ড এর কটকট আওয়াজ থেকে প্রকাশকের ছাপা মেশিনে গটগট আওয়াজ তোলার পেছনে যিনি মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছেন তিনি গুণি কবি ও কথাসাহিত্যিক, বহু গ্রন্থ প্রণেতা শ্রদ্ধেয় আমির হোসেন স্যার। এই বইটি প্রকাশের জন্য তিনি আমাকে উৎসাহ অনুপ্রেরণা দেওয়ার পাশাপাশি প্রকাশকের সঙ্গে যোগাযোগ করা, গল্পটি সম্পর্কে অভিমত লিখে দেয়া, প্রুফ দেখাসহ নানান পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তাই সবশেষে ঝকঝকে ছাপা কপির প্রথম বইটি স্যারের হাতে তুলে দিতে পেরে আমি ভীষণ আনন্দিত হয়েছিলাম। এছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাহিরে দেশের উল্লেখযোগ্য বেশ কিছু পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে আমার লেখা ছড়া, কবিতা প্রকাশরে ব্যবস্থা করেন এবং আরো কিছু লেখা প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।


‘হোসেন ঘরনা’ ও সুবর্ণজয়ন্তীর সংখ্যা বিষয়ক কিছু কথা।

একটি কথা বহুল প্রচলিত রয়েছে যে, ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে বতর্মানে তিনজন ‘হোসেন ঘরনা’ রয়েছেন। তাঁরা হলেন জয়দুল হোসেন, আমির হোসেন ও মনির হোসেন। এই তিন ঘরনার ব্যক্তিগণ কখনো নিজ নিজ ঘরনার মধ্যে, কখনো একে অপরের সমন্বয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিকে ধারণ, লালন ও বিকাশে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে কথাসাহিত্যিক আমির হোসেন ঘরনা আলাদা জ্যোতিতে জ্যোতির্মান। এই তিন ঘরনার সম্মিলিত প্রয়াসই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বর্তমান সাহিত্য-সংস্কৃতির দর্পণ বলে ধরে নেয়া যায়। তবে এর বাইরে আরো গুণি ব্যক্তি রয়েছেন। এবং তারাও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাহিত্য-সংস্কৃতি বিকাশে নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এই তিন ঘরনার অন্যতম প্রখ্যাত কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও সংগঠক আমির হোসেন স্যারের ৫০তম জন্মদিন উদযাপিত হয় ৫ জানুয়ারি ২০২৩ খ্রি.। তাঁর সুবর্ণজয়ন্তীর এই আনন্দময় মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে চেতনায় স্বদেশ গণগ্রন্থাগার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর নিয়মিত প্রকাশনা সাহিত্যের ছোট কাগজ ‘স্বদেশ’ এর একটি সংখ্যা বিশেষ সংখ্যা হিসেবে ‘কথাসাহিত্যিক আমির হোসেন’ সংখ্যা-২০২৩ খ্রি. হিসেবে প্রকাশ করা হয়। 


এই ঐতিহাসিক সংখ্যাটি বাংলা সাহিত্যের বর্তমান লেখকদের লেখা একটি মহাসম্মেলনে পরিণত হয়। এই সংখ্যায় দেশের প্রথিতযশা লেখকদের সাথে দুই বাংলার জনপ্রিয় লেখকদের লেখা স্থান পেয়েছে। এছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলা ভাষাভাষী লেখকদের লেখাও পেয়েছি আমরা। মোট ১৩৫ জন লেখকের মধ্যে একদিকে নবীণ-প্রবীণ, নারী-পুরষ-তৃতীয় লিঙ্গের লেখকও রয়েছেন। অন্যদিকে পেশাদার লেখক ছাড়াও রাজনীতিবীদ, চাকরীজীবী, ব্যবসায়ীসহ অনান্য পেশার লেখকও রয়েছেন। রয়েছেন ভিন্ন ধর্মমতালম্বী (হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান) মানুষের লেখা। গুণি এসব লেখকদের সমন্বয়ে একটি নান্দনিক সংখ্যা আমরা আপনাদের হাতে তুলে দিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। সংখ্যাটি সম্পাদনা ও প্রকাশনার সাথে যুক্ত থাকতে পেরে আমি গর্ব অনুভব করছি।


উপসংহার

জ্ঞানে-গুণে, ব্যক্তিত্বে, সাহিত্য প্রতিভায়, সাংগঠনিক কর্মদক্ষতায় কথাসাহিত্যিক আমির হোসেন স্যার সত্যিই অসাধারণ এক ব্যক্তিত্ব। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আকাশে অসংখ্য গুণি ব্যক্তিদের মাঝে তিনি অনন্য এক তারা। নিজ কর্মের উজ্জ্বল স্বাক্ষরে তিনি আজীবন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আকাশে ধ্রুবতারার মতোই জ্বলজ্বল করবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। তাঁর থেকে বিচ্ছুরিত আলোকরশ্মি যুগে যুগে পথ দেখাবে আগামী দিনের তরুণ সাহিত্য-সংস্কৃতি কর্মীদের। আর আমরা সারাজীবন গৌরব করব তার জ্ঞান-কূপের প্রথমসারির পাঠক হিসেবে। পরিশেষে বর্তমান পৃথীবিতে বসবাস করা ৮০০ কোটি মানুষের মধ্যে কথাসাহিত্যিক আমির হোসেন স্যার তাঁর মহৎ ও সৃষ্টিশীল কাজের মাধ্যমে চির অমর হয়ে থাকবেন, এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমি কথাসাহিত্যিক আমির হোসেন স্যারের উত্তরোত্তর সাফল্য ও সমৃদ্ধি কামনা করছি। সবার উত্তরোত্তর সাফল্য ও সমৃদ্ধি কামনা করছি। 


(বি: দ্র: এই লেখাটি জাতীয় সাহিত্য সাময়িকী নব ভাবনার প্রিয় লেখক সংখ্যা-২০২৩- প্রকাশিত হয়েছে।)


মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ 
প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালক, ঝিলমিল একাডেমি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
সম্পাদক-প্রকাশক, জাতীয় শিশু-কিশোর সাময়িকী, কিচিরমিচির
mishrabon@gmail.com/01717-095751

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ