Ticker

6/recent/ticker-posts

আমি কেনো ভাইরাল ইস্যু নিয়ে লিখি না


অনেকেই ভাবেন, কেউ কেউ আমাকে বলেন, এই বিষয় নিয়ে লিখো, বিষয় নিয়ে লিখো, বা বিষয় নিয়ে কিছু লিখলে না কেনো। আসলে নিজ জেলা বা দেশে-বিদেশে চলমান ভাইরাল কোনো ইস্যু নিয়ে আমার খুব বেশি লেখা হয় না। ভাইরাল ইস্যু লিখবো লিখবো বলে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে করতে অন্য আরেকটি ইস্যু আলোচনায় চলে আসে। আবার ডিউটি, পারিবারিক, ব্যক্তিগত, সাংগঠনিক ব্যস্ততা বা প্রকাশনার কাজতো প্রত্যেকদিনই থাকেই। অনেক সময় নিউজ বা এস্যাইনমেন্ট লেখাও লিখতে হয়। বলতে দ্বিধা নেই মাঝে মাঝে আমার কিছু বাণিজ্যিক কাজ বা লিখাও থাকে।

 

এসবের কারণে একদিনে কোনো একটি বিষয় নিয়ে দীর্ঘ সময় বের করা আমার জন্য খুব কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে ভাইরাল অনেক বিষয় নিয়ে আমার খুব বেশি লেখা হয় না। আর অল্প কথায় কিছু লিখে কোন বিষয়ের পক্ষে বিপক্ষে অবস্থানে নিজের অবস্থান জানান দেওয়ার কোন ইচ্ছাও আমার নেই। পৃথিবীর সব বিষয় নিয়ে আমাকে লিখতে হবে, মতামত দিতে হবে, এমন কোনো কথাও নেই। আমি সাহিত্যের ছাত্র। সাহিত্য চর্চা করি। চেষ্টা করি যাই লিখি সেটা যেন কিছুটা হলেও সাহিত্য হয়ে ওঠে। শুধু স্ট্যাটাসজীবী হলে সারাদিন অনেক বিষয় নিয়েই স্ট্যাটাস দেওয়া যায়।

 

কিন্তু লিখতে গেলে; বিশেষত গদ্য লিখতে গেলে অনেক তথ্য উপাত্তের দরকার হয়। আর এসব সংগ্রহ করে ভালো একটা লেখা রেডি করতেই / দিন বা তার চেয়েও বেশি সময় লেগে যায় লেগে যায়। ইস্যু ভিত্তিক আমার লেখা অনেক অপ্রকাশিত গদ্য আছে। যেগুলো ইস্যু পরিবর্তন হওয়ায় আর প্রকাশিত হয় নাই। মাঝে মাঝে ভাবি আমিও স্টাট্যাসজীবী হব। আর অন্যদের মতো বিভিন্ন বিষয়ে মতামত দিয়ে নিজেকে বুদ্ধিজীবী হিসেবে প্রমাণ করব। কিন্তু পরে আর তা করা হয় না।

 

সাধারণত আমার যখন যেটা মনে হয়, সাথে সাথে লিখে রাখি বা সারাংশ নোট করে রাখি। পরবর্বীতে সুবিধাজনক সময় একটু একটু করে প্রয়োজনীয় এডিটিং করে রাখি। ছোটো বড়ো লেখা মিলিয়ে এরকম প্রায় ৪৫৮টি লেখা এখনো এডিটিং বাকী। এডিটিং করা আছে কিন্তু কোথায় প্রকাশ করা হয় নাই, এরকম লেখার সংখ্যাও কম নয়। (বি:দ্র: এসব কথা যাদের বিশ্বাস হবে না, তারা আমার মোবাইল নোট চেক করে দেখতে পারেন।)

 

এবার মূল কথায় আসি, বড় লেখকদের অবশ্য এসব ঝামেলা নেই। তারা সাধারণত যা লেখেন তাই লেখা হয়ে ওঠে। কারণ লেখার সময় তাদের খুব বেশি তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করকে হয় না। সেটা তাদের মাথাতেই থাকে! নিজেদের অসাধারণ মেধার গুণে তাদের প্রতিটি লেখাও হয়ে ওঠে মানসম্মত। সেগুলো তাদের খুব বেশি এডিটিংও করতে হয় না। প্রকাশনী সংস্থা এবং মিডিয়াগুলো তাদের লেখা নেওয়ার জন্য রেডি থাকে। ফলে তারা এক বসাতে যা লেখেন তাই লেখা হয়ে ওঠে, সেই সাথে প্রকাশও হয়ে যায়।

 

আমাদের মত ছোট লেখকদের দু-একটা লেখা প্রকাশ হলে বা ফেসবুকে পোস্ট করা হলে দেখা যায় সেই লেখাটা অনেকেই পড়েন না। তাতে অবশ্য আমার কিছু যায় আসে না। কারণ আমি সবার জন্য লিখি না। শুধু আমি কেনো, কোনো লেখকই সবার জন্য লেখে না। লেখক লিখে পাঠকের জন্য। আর প্রতিটি লেখার কিছু নির্দিষ্ট পাঠক থাকে। যারা সত্যিকার পাঠক তারা ঠিকই দীর্ঘ লেখা পড়ে। যে ধরনের লেখাই হোক, যে মানের লেখাই হোক। লেখক ঠিকই তার পাঠককে এবং পাঠক ঠিকই তার নিজের পছন্দের লেখাকে খুঁজে নেয়।

 

এজন্য অনেক লেখার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক বা অপ্রাসঙ্গিক ছবিযুক্ত করে দেই। কারণ জানি লেখাটি অনেকে পড়বে না। কিন্তু ছবি দেখে একটু লাইক কমেন্ট করে। সেই লাইক, কমেন্ট লেখাটিকে তার কাঙ্ক্ষিত পাঠকের কাছে পৌঁছাতে সহায়তা করে। আমরা অবশ্য কমেন্টের ধরণ দেখেই বুজি কে পড়ে কমেন্ট করেছে, আর কে না পড়ে কমেন্ট করেছে।

 

গত এক বছরে বেশ কিছু নামি দামি পত্রিকাতে লেখা পাঠিয়েছি, যার বেশিরভাগই প্রকাশিত হয় নাই। এতে কিন্তু আমি হতাশ নই। কারণ কোনো লেখা প্রকাশিত না হলে আমি ধরে নেই যে, সেটি প্রকাশযোগ্য মানসম্মত হয়নি। ফলে লেখাটি বারবার রিভিউ করি এবং প্রয়োজনীয় সংশোধন সংযোজন-বিয়োজন করি। এতে করে আমি নিজের লেখার ভিতরে একটি পরিবর্তন অনুভব করি। মানে অর্থাৎ আগে লেখাটি যে-রকম ছিল একই লেখাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপনের নতুন কৌশল অবলম্বন করি। তাই লেখা প্রকাশ হলেও ভালো লাগে, প্রকাশ না হলেও ভালো লাগে। আমি আশাবাদী আমার অপ্রকাশিত লেখাগুলো আরো আপডেট হয়ে একদিন সত্যিই সত্যিই আলোর মুখ দেখবে। আর সেসব লেখা পাঠকদের পছন্দ হবে- এটাই আমার প্রত্যাশা।

 

আমি কেনো ভাইরাল ইস্যু নিয়ে লিখি না

মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ

সন্ধ্যা ছয়টা ২৮

০১ এপ্রিল ২০২৩

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ