Ticker

6/recent/ticker-posts

আলোচনার মাধ্যমেই চলমান সমস্যার সমাধান হোক।

দেশে-দেশে, কালে-কালে কত রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষ হয়েছে আলোচনার মাধ্যমে । বছর বছর চলতে থাকা এসব যুদ্ধে হাজার-হাজার, লাখ-লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করার পরও উভয় পক্ষকে শেষ পর্যন্ত আসতে হয়েছে আলোচনার টেবিলে। কত দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও বিভিন্ন পক্ষকে দেশ গঠনে বসতে হয়েছে যুদ্ধের ময়দানে লড়তে থাকা বিপক্ষ দলের সাথে। 

আলোচনায় যেহেতু সংঘর্ষ এড়ানো সম্ভব, মৃত্যু, আহত হওয়া বা সহায় সম্পদের ক্ষতি এড়ানো সম্ভব- তাহলে এই বিরূপ পরিস্থিতিতে, আমাদের দেশের সকল মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আলোচনাই একমাত্র উত্তম প্রথা।  দেরিতে হলেও সরকার যেহেতু আলোচনার বসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন- সে ক্ষেত্রে ছাত্রনেতাদের উচিত তাদের সকল দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনায় বসা।

সকল মৃত্যুই শোকের, কষ্টের-বেদনা। কোনো মৃত্যুকেই, হত্যাকেই কোনোভাবেই জাস্টিফাই করা যায় না,  বৈধতা দেওয়া যায় না, মেনে নেয়া যায় না। তাই সকল হত্যারই বিচার হওয়া উচিত। এই চাওয়াটা যেমন দেশের অনেক মানুষের, ঠিক তেমনি ০১ জন ছাত্র হত্যার প্রতিবাদ-প্রতিশোধ নিতে গিয়ে ২০০ জন মায়ের বুক খালি হয়েছে। ২০০ জন হত্যার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে ২০০০ জন মানুষের মৃত্যু না হোক- এই চাওয়াও আরো অনেক মানুষের। 

আজ দেশে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে জমায়েতের ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। অর্থাৎ সব পক্ষই আজ মাঠে থাকবে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী নেতাদের বুঝতে হবে তারা একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। তাদের সাথে মিশে আছে সরকার বিরোধী আরও অসংখ্য সংগঠন, যারা দীর্ঘদিন সরকারের সাথে নানা আন্দোলন করে পেড়ে না উঠে এখন সাধারণ ছাত্রের আড়ালে তাদের সাথে মিছে গিয়েছে। তারাও এখন মারমুখী আচরণ করবে। আর তাদের সাথে আছে নিতান্তই কিছু সাধারণ মানুষ।  সরকার যদি আগেরবারের মতো কঠোর অবস্থানে যায়, এই সমস্ত সাধারণ মানুষ, নারী শিশু বৃদ্ধ নিয়ে দেশের প্রশিক্ষিত অস্ত্রধারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অথবা আওয়ামী লীগের মতো একটি বড় দলের সাথে সংঘর্ষে নামার অর্থ দেশে আরো অনেক মৃত্যু।  

১৯৬৯ সালের অসহযোগ আন্দোলন ছিল একটি বিদেশি সরকারের বিরুদ্ধে। প্রেক্ষাপটও ছিল ভিন্ন। সেখানে ছিল না এক দফা। ছিল ১১ দফা। সেই অসহযোগ আন্দোলন সফল হলেও দেশকে একটি যুদ্ধের দিকে ঠিকই এগিয়ে যেতে হয়েছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত হয়ে পাকিস্তান বাহিনী দেশ ত্যাগ করলেও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের অসহযোগ আন্দোলন বা এক দফার প্রেক্ষিতে দেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হবে তাতে দেশ দীর্ঘমেয়াদি একটি গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত হবে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষয় ক্ষতির শিকার হবে দেশের ১৮ কোটি মানুষ— তাই সংঘর্ষ সংঘাত নয়- আলোচনার মাধ্যমেই চলমান সমস্যার সমাধান হোক।  

যারা মারা গেছে তারা যেমন এই দেশের নাগরিক- যারা মেরেছে তারও এই দেশের নাগরিক। সবাই একে অপরের ভাই- ভাইয়ে ভাইয়ে লাড়াই-সংঘাত বন্ধ হোক।

মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ

৪ আগস্ট ২৪

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ