Ticker

6/recent/ticker-posts

জন্মদিন পালনের এই ভয়ানক কুসংস্কৃতি বন্ধ হোক

জন্মদিন পালনের এই ভয়ানক কুসংস্কৃতি বন্ধ হোক

এক হালি ডিমের বর্তমান বাজার মূল্য ৫২ টাকা। এক ক্যারেট ডিমের মূল্য ৩৯০ টাকা। এক কেজি আটার মূল্য ৬০-৭০ টাকা।

তোমরা যারা বন্ধুর জন্মদিন পালন করার জন্য বন্ধুকে গাছের সাথে হাত পা বেঁধে সেই বন্ধুর মাথায় বা গায়ে আটা মেখে, ডিম ভেঙে নষ্ট করলে, তারা কি একবারও ভেবে দেখেছ- এই টাকা তোমাদের উপার্জনের নয়? তোমার বাবার টাকা আছে বলেই অথবা তোমার উপার্জনের টাকা হলেই যে তুমি খাদ্যের অপচয় করবে- এর বৈধতা পেলে কোথায়?

তোমরা শিক্ষার্থী, বাবা-মার কষ্টার্জিত টাকায় লেখাপড়া করছো। তোমাদের বয়সী আরো অনেক ছেলেমেয়েরা এই বয়সে হোটেল রেস্টুরেন্টে কাজ করছে, রিকশা চালাচ্ছে, কল-কারখানায়, বিভিন্ন ওয়ার্কশপে কঠিন পরিশ্রম করছে। বন্ধুতো তাদেরও আছে!  জন্মদিন তো তাদেরও আছে! কই- তারা তো জন্মদিন পালনের নামে এই কুসংস্কৃতি পালন করে না, খাদ্যের অপচয় করে না। তোমরা শিক্ষিত হয়ে এসব কেনো করছ ?

আচ্ছা তোমরা তো রাস্তাঘাটে চলাফেরা করো, তোমরা কি একবারও দেখ না ছোট, বড়, বৃদ্ধ বয়সী  অন্ধ, খোঁড়া কত মানুষ ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করছে। একবারও কি ভেবে দেখেছো- তোমাদের অপচয়কৃত এই সমপরিমাণ খাদ্য জোগাড় করতে তাদের কতটা রোদে, বৃষ্টিতে ভিজতে হয়। কতজনের দুয়ারে দুয়ারে যেতে হয়। হাত পাততে হয়। তারপরেও কি তারা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় আমিষ চাহিদা পূরণ করতে পারে ? তোমরা কি জানো এ দেশে রোজ কত শিশু না খেয়ে ঘুমায়, কত শিশু একবেলা ভালো খাবারের আশায় দিনের পর দিন পার করে, সে হিসেব কি তোমাদের কাছে আছে?

জন্মদিন পালন আমাদের ধর্মে বৈধতা আছে- কি নেই, দেশের আইনে বাধা-নিষেধ আছে- কি নেই, এর সামাজিক প্রয়োজনীয়তাই বা কতটুকু- সেই হিসেবে না হয় নাই গেলাম। জন্মদিন যদি পালন করতেই হয় তাহলে অন্য কোনোভাবেওতো করতে পারো। কোনো বন্ধুর জন্মদিনের আগে খোঁজ নাও সেই মুহূর্তে তার কোন জিনিসটি বেশি প্রয়োজন। তার বই, খাতা, কলম, ব্যাগ, জামাকাপড়, খেলানা সামগ্রী, পরীক্ষার ফিস বা এইরকম আরো কিছু জিনিস নিজেরা চাঁদা দিয়ে তুলে তাকে উপহার দিতে পারো। বন্ধুর জন্মদিনে সবাই মিলে চাঁদা তুলে কোনো গরীব অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করতে পারো। বন্ধুর জন্মদিনে কোথাও গাছ লাগাতে পারো। বন্ধুর জন্মদিনে তার মা-বাবাকে সবাইকে মিলে কোনো এক উপহার দিতে পারো। তোমাদের একজন ভালো বন্ধু উপহার দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাতে পারো। ছুটির দিনে কোনো বন্ধুর জন্মদিন হলে তাকে নিয়ে কোনো দর্শনীয় স্থান ঘুরে আসতে পারো। বন্ধুর জন্মদিনে ধর্মীয় অনুষ্ঠান করতে পারো- এসবের চেয়ে বড় আনন্দ কারো জন্মদিনে আর কি হতে পারে- বলো !

ছাত্রজীবন থেকেই এই শিক্ষা, মুল্যবোধ যদি না অর্জন করতে পারো, তবে বড়ো হয়ে তোমাদের লেখাপড়া কোন কাজে লাগবে ? বড় হয়ে পরিবার, সমাজ বা দেশের জন্য কি উপকারে আসবে তোমরা ? পোকা-মাকর, কীট-পতঙ্গ, বা পশুর পাখির মত শুধু জন্মগ্রহণ করলে, আনন্দ ফুর্তি করে তার পরে একদিন হুট করে মরেই যাওয়ার নাম তো মানব জীবন নয়। জীবনে কোনো মানুষের উপকারে না আসতে পারলে মানবজীবন সার্থক হয় কী করে !


আমার আরেকটা বিষয় অবাক করে, শুধু অবাকই না এটি একটি ভয়ংকর প্রক্রিয়াও বটে, তা হলো হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তাকে যখন ডিম ছুড়ে মারো- এই ডিম যদি তার চোখে লাগে, তবে সারা জীবনের জন্য অন্ধ হয়ে যেতে পারে তোমার প্রিয় বন্ধু।

আবার কেউ কেউ বার্থডে বয়কে ধাক্কা-ধাক্কি করে পুকুরের পানিতে ফেলে দেয়, কতটা ভয়ানক কাজ এসব! যাকে ফেলে দিচ্ছো সে বন্ধু সাঁতার জানে কি না, কখনো খোঁজ নিয়েছ।? ছোট্ট একটি দুর্ঘটনা তোমার বা অন্যদের সারা জীবনের কান্না হয়ে দেখা দিতে পারে- একবার কি ভেবে দেখেছো?

এসব বিষয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবকদেরও সতর্ক হতে হবে। ছেলে-মেয়েদের ভালো কাজের পরামর্শ ও উৎসাহ দিতে হবে। এই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আপনারা যদি ভালোটা শিখিয়ে না দেন তাহলে খারাপ সঙ্গ বা সমাজ তাকে মন্দটা শিখিয়ে দেবে। আর এর ফলাফল ভোগ করতে হবে আপনাকেই। তাই সময় থাকতে সচেতন হোন এখনই।


জন্মদিন পালনের এই ভয়ানক কুসংস্কৃতি বন্ধ হোক

মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ

১৮ সেপ্টেম্বর ২৩

টেংকেরপাড়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ