Ticker

6/recent/ticker-posts

ইঁচড়ে পাকাদের গল্পসমূহ



বাসর রাতে জামাই-বউয়ের প্রচণ্ড ঝগড়া। বর-বধু উভয়ে মঙ্গল ‍ও বুধ গ্রহের একটি বিশেষ সংগঠনের কর্মী। দুইজন আলাদা আলাদা গ্রহের কর্মী হওয়ায় তাদের মধ্যে পারস্পারিক যোগাযোগ ছিল না। ঘটক মারফত তাদের বিয়ে হয়েছে। সে যাই হোক, সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে বর ঢুকলো বাসর ঘরে। যেয়ে দেখে তার বউ ঘোমটা দিয়ে খাঁটে বসে আছে।এমনিতেই সে একজন প্রতিবাদী সংগঠনের কর্মী। সবকিছুতেই তার প্রতিবাদ করার  অভ্যাস। নিজের সদ্য পরিণীতা বৌকে ঘোমটা পরিহিতা দেখে তার মেজাজ চরম খারাপ হয়ে উঠলো। সে বৌ-কে বলল তুমি আমার বিয়ে করা বউ, আমার সামনে তুমি ঘোমটা পড়ে আছো কেন ? বউ পড়ে গেল টেনসনে। তার জামাই কি পাগল, না বদরাগী! বৌ ভাবছে, মঙ্গলগ্রহের সব নববধূরা বাসরঘরে ঘোমটা পড়ে বসে থাকে- এটা তো পর্দার কোন বিষয় নয়।  এটা শিষ্টাচার, সৌজন্যতা, ভদ্রতা এবং নারীদের চিয়ারিত বৈশিষ্ট্য লাজুকতা। এইখানে আবার প্রতিবাদ করার কি হলো। এসব ভাবনার মাঝেই বর চিৎকার-চেচামেচি শুরু করে দিলো, এই বৌ মানি না, ঘোমটা পড়া বৌ মানি না। মানবো না।–ইত্যাদি। বউ ছিল ওই একই দলের সংগঠনের কর্মী। তারও মেজাজ খারাপ হইতে আর কতক্ষণ! শেষে বাসর রাতে জামাই বউয়ের তর্ক-বিতর্ক এক পর্যায়ে  হাতাহাতিও হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত তাদের মধুচন্দ্রিমাতো হলোই না বরং পরের দিন তাদেরই বিচ্ছেদ হয়ে গেল। বিচ্ছেদের  একদিন পরে সেই বরকে তার বন্ধুরা জিজ্ঞেস করল , কি ব্যাপার বন্ধু, নতুন বউয়ের সঙ্গে ঝগড়ায় জড়িয়ে গেলি কেনো। তখন সেই  যুবক উত্তর দিলআসলে সবসময় প্রতিবাদ করে অভ্যাস তো, কোথায় প্রতিবাদ করতে হয় আর কোথায় সহনশীল হতে হয় আমার সংগঠনের নেতারা আমাকে শিখাইনি। তারা আমাকে শুধু প্রতিবাদ করতে শিখাইছে। ধ্যর্য ধরতে শিখাইনি, কৌশলী হতে শিখাইনি। আর তাদের কথা শুনে আজকে আমি বউ ছাড়া।

এবার আরেকটা গল্প বলি। গ্রাম থেকে এক লোক আসলো শহরে। সদর হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে। লোকটা সদর হাসপাতালে টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ডাক্তার দেখালো। সে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আশেপাশের লোকদেরকে বলতে লাগলোএই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিরাট দূর্ণীতিগ্রস্থ। তারা খারাপ। সরকারি সেবা যেখানে ফ্রি দেওয়ার কথা, সেখানে টাকা নিয়ে ফি নিয়ে তার জনগণের সাথে প্রতারণা করছে। পাশের এক লোকে বলল ‘যে কোন প্রাইভেট হাসপাতালে বর্তমান ৫০০ টাকার নিচে ডাক্তারের ভিজিট নেই। অথচ সেখানে টাকা দিয়ে  সরাকারি হাসপাতাল হাজার টাকার সেবা দেয়। এই ৫ টাকা তারা টাকা কালেকশনের জন্য করে না। বরং প্রকৃত রোগীদের দৈনিন্দন সংখ্যা নিরূপণ একটি শৃঙ্খলা বিন্যাস করার জন্যই রেজিস্টেশন বাবাদ এই টাকা নেয়া হয়। এছাড়াও আরো দুটি মনস্তাত্তিক কারণও আছে, (এক) জনগণকে বোঝানো  কোন কিছু ফ্রিতে নেয়া ঠিক নয়। আর ফ্রি ফেলে তার সঠিক ব্যবহার করতে হয়। দুই কোন ভদ্র লোক যেন  এটা না ভাবে যে আমি কেন ফ্রি সেবা নেবো। যে হাসপাতালে একজন রোগীর পিছনে অনেক টাকা চিকিৎসা বাবদ ব্যয় করা হয়, সেখানে টাকা নেওয়া দুর্ণীতি না সেইটা যারা বোঝে না তাদেরকে গাধা ছাড়া আর কি বলা যায় ?

আরেকটি গল্প শোনেন, এক রাজা রাজদরবারে বসে দরবার পরিচালনা করছেন। এমন সময় একটি ব্যাঙ এসে রাজার পায়ে বারবার লাথি মারছে। এই দেখে প্রহরী এসে ব্যাঙটিকে ধরার চেষ্টা করল। তখন রাজা বললতোমরা ব্যাঙটাকে ধইরো না, আগে বুঝতে দাও, কেন সে আমাকে  লাথি মারতেছে। ব্যাঙের দিকে নজর রাখো। সে কোন দিকে যায়, তারপর আমাকে এসে বিস্তারিত জানাবে। সিপাহীরা ব্যাঙকে অনুসরণ করতে করতে ব্যাঙের বাসার কাছে চলে গেল। সেখানে তারা দেখলো যে ব্যঙের বাসায় একটি স্বর্ণমুদ্রা পড়ে আছে। সিপাহীরা একথা এসে রাজাকে জানালো। রাজা তখন হাসতে হাসতে বললে বুঝেছি হঠাৎ করে টাকার মালিক হয়েছে তো- তাই টাকার গরমে সে নিজেকে অনেক বড়লোক ভাবছে। তাই আমার পায়ে এসে লাথি মেরেছে। কিন্তু এরকম হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ স্বর্ণ মুদ্রা আমার কোষাগারে জমা আছে এইটা বোঝার ক্ষমতা ওই ব্যাঙের নাই। ব্যাঙের কাজ শুধু লাফানো, তাই সুযোগ পাইলে সে শুধু লাফায়।

আমাদের সমাজেও এক ধরনের মানুষ আছে, হঠাৎ করে টাকার মালিক হলে কি বলবে, আর কি করবে সে বিষয়ে, তখন তাদের কোন হুশ থাকে নাআরেকদল লোক আছে হাতে মাইক্রোফোন পাইলে মনে করে আমাকে আর পায় কে, আমি যা বলব লোকজন তাই শুনবে, তাই মানবে, আর মনে প্রাণে গ্রহণ করবে । কিন্তু লোকজন যে তাকে অভদ্র-বেয়াদব বলবে  সেটা বোজার ক্ষমতা তাদের থাকে না।

এবার আরেকটা কথা গল্প বলে শেষ করি একদল মুরুব্বী কোথাও বসে গল্প গুজব করছেন। পাশে একদল বালক বল খেলছিল। হঠাৎ বলটি এসে সেই মুরুব্বিদের পাশে এসে পরে। তখন বালকেরা একে অপরকে বলাবলি করতেছে মুরুব্বিদের কাছ থেকে কে বলটা নিয়ে আসবে। কারণ বেয়াদবীর ভয়ে তারা কেউ মুরুব্বিদের কাছে আসার সাহস পাচ্ছিল না। সাহস পাচ্ছিল না বলটি আনার জন্য হঠাৎ একটি বালক বললোআরে বল আনা কোন ব্যাপার নাকি। এটার জন্য কি তারা আমাকে বকবে না মারবে। আমার বল আমি আনবো, এটার জন্য তারা আমাকে বকা দিবে কেনো। বলে সে মুরুব্বীদের কাছ থেকে বলটি নিয়ে আসলো মুরুব্বিদের মধ্যে একজন তখন বলল ‘ খোঁজ নিয়ে দেখবে এই ছেলেটির লালনপালন, শিক্ষা-দিক্ষা ভালো ঘরে হয় নাই। সঠিক শিক্ষা না পেলে কোন ছেলে বড়দের সাথে  বেয়াদবি করে না।

বিঃদ্রঃ ইঁচড়ে পাকাদের যথাসময়ে কানমলা না দিলে সারাজীবন তারা বেয়াদব থাকার সম্ভবনা বেশী।


শুভরাত্রি রাত্রি

মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ

রাত, ১. ৩৯

টেংকেরপাড়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ