Ticker

6/recent/ticker-posts

স্বাধীনতার ৫০ বছর - আমাদের প্রাপ্তি, ব্যর্থতা ও প্রত্যাশা। (প্রবন্ধ)


প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৫০ বছর হল। বিগত ৫০ বছরে আমাদের জাতীয় অর্জন অনেক। আবার ব্যর্থতার সংখ্যাও কম নয়। কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তে অর্জিত বাংলা।
অতীতের বিভিন্ন ভালো-মন্দ ঘটনার কথা গুলো বাদ দিয়ে শুধুমাত্র গত এক দশকের কিছু বিষয় যদি আমাদের সামনে আনি। যেমন ঃ- বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, বিশাল সমুদ্রসীমা জয়, সিটমহল সমস্যার সমাধান, ১০ লাখ নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী-কে আশ্রয় প্রদান। মহাশূন্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার সহ যোগাযোগব্যবস্থায় প্রভূত উন্নয়ন।
শহর এলাকায় সুউচ্চ ভবন, বিভিন্ন শিল্প কারখানা প্রতিস্থাপন। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট, স্যাটেলাইট টেলিভিশন। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন ভাতা প্রদান ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ স্বাধীনতার ৫০ বছর পর সরকারের ৬ লাখ কোটি টাকার বাজেট একদিকে যেমন আমাদের জাতীয় উন্নয়নের বার্তা বহন করে।
তেমনি আবার শেয়ার বাজার লুট, বিডিআর বিদ্রোহ, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্থ লোপাট। স্বাস্থ্যসেবা, রেল খাতসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের বিভাগীয় ক্ষমতার অপব্যবহার। কিছু কিছু ব্যক্তির আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়া। ব্যক্তিগত মত প্রকাশ, গণমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা ও স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন।

সাগর-রুনি, তনু, নুসরাত, রিফাত-মিন্নি,খাদিজা-বদরুল, আবরার, ছাত্র হোস্টেলে গৃহবধূ ধর্ষণ, চলন্ত বাসে ধর্ষণ, মেজর সিনহা হত্যা, সাত খুন, গুজবে মানুষ হত্যার চাঞ্চল্যকর ঘটনা সমূহ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। টিকটক, লাইকি, ফ্রী ফায়ার আর পাবজিতে মজে থাকা দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তরুণ সমাজ। মদ, গাজা, হিরোইন, ইয়াবা, ফেন্সিডিল আর হালে এলএসডিতে আসক্ত যু্ব সমাজ।



একের পর এক এসব অনিয়ম, অত্যাচার, দুর্নীতি, হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার ঘটনাগুলো আমাদের ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনের ব্যর্থতা গুলোকেও স্মরণ করে দেয় বারবার।
বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতা কমলেও প্রকৃত স্থিতিশীলতা কি অর্জন হয়েছে বাংলাদেশের ?? দেশের শাসনতন্ত্র, সরকার, আইন ও বিচার ব্যবস্তা এবং নির্বাচন নিয়ে জনগণের প্রশ্ন তোলা কি বন্ধ হয়েছে ??
বিগত ৫০ বছরে অনেক কিছু অর্জন করেছি আমরা। আরো অনেক কিছু অর্জন করতে হবে। তার নেতৃত্ব দিবে তরুণ ও যুব সমাজ। কিন্তু যে প্রজন্ম নেতৃত্ব দিবে ভবিষ্যতের বাংলাদেশের, সে প্রজন্মের হাতে কি আজ বই আছে।? আছে কি গবেষণার বিষয় বা যন্ত্র।
আমরা কি আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ বাংলাদেশ দিতে পেরেছি। যে বাংলাদেশে ভিনদেশী সংস্কৃতি স্টাইলে মধ্যরাতে নাইট ক্লাবে যাবে না কোন তরুণ-তরুণী। আবার গেলেও এবং কোন নারী খোলামেলা পোশাক পড়লেও, কালো বোরকা আবৃত থাকলেও, এমনকি গভীর রাতে একা একা চলাচল করলেও কোন শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী নারীরা নির্যাতিত হবে না রাস্তাঘাট বা চলন্ত বাসে। ঘরে নির্যাতিত হবে না কোন গৃহবধু বা কাজের মেয়ে।

আর অনাকাংখিত ভাবে এমন কিছু হলেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে। সরকারের প্রত্যেকটা দপ্তর নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবে। যেখানে দেশের কোন নির্যাতিত অসহায় নাগরিক ন্যায় বিচার পাবার জন্য সরকার প্রধানকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিজের দাবি উপস্থাপন করতে হবেনা।
দেশের প্রতিটি নাগরিক রাষ্ট্রের প্রতি ভালোবাসা দেখাবে, দায়িত্ববোধ দেখাবে, রাষ্ট্রের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে, দেশের উন্নয়নে নিজেকে বিলিয়ে দেবে, পরিচ্ছন্ন শহর-গ্রাম গড়ে তুলবে।
সেই রাষ্ট্র কি আমরা তুলে দিতে পারব আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে ?


করোনা, ডেঙ্গু, রোড এক্সিডেন্ট, বৈদ্যুতিক শক, বজ্রপাত, কারো ছুড়ি বা গুলির আঘাতে হঠাৎ করে যদি মারা যাই, আমার সন্তান কি নিরাপদে বড় হতে পারবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় ??
এই লেখায় ব্যবহত ছবিগুলি গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের সুবর্ণজয়ন্তীর উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহীদ স্মৃতিসৌধ শ্রদ্ধা জানানোর পর তোলা।

ওই দিন সন্ধ্যায় এবং তার পরবর্তী দুই দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইতিহাসে সবচেয়ে নারকীয় তাণ্ডব, ধ্বংস ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। দেশের সাধারণ জনগণের শ্রমে ঘামে কষ্টার্জীত টাকার চাঁদায় পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাত্ররা যখন জনগণের করের টাকায় নির্মিত সম্পত্তি রেল স্টেশন, পৌরসভা, ভূমি অফিস ও মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্ন সম্বলিত স্থাপনায় ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করে এবং তারা যদি দাবি করে যে তারা সত্যি ধর্ম অনুসারী ও শ্রেষ্ঠ মানুষ! শান্তির ধর্মের অনুসারী হয়ে যখন তারা অশান্তির বার্তা ছড়ায়, তখন আমাদের বুঝতে হবে জাতি হিসেবে আমাদের অর্জনের আরো অনেক কিছুই বাকি আছে।

আজ হেফাজেতে ইসলামের তাণ্ডবে ধ্বংসপ্রাপ্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেল স্টেশনে সীমিত আকারে রেল যোগাযোগ শুরু হয়েছে। খুব শিগ্রই আমার ভাগিনা-ভাগনি তাদের মামার বাড়িতে বেড়াতে আসতে পারবে।

স্বাধীনতার ৫০ বছর - আমাদের প্রাপ্তি, ব্যর্থতা ও প্রত্যাশা।

মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ
১৫ মার্চ ২০২১ খ্রি.






একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ