মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’
কোন বড় ধরনের ক্ষতি না করেই বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিয়েছে। যদিও বাংলাদেশে প্রবেশের আগে থেকেই এটি দূর্বল হয়েছে, তবে পূর্ণশক্তি নিয়ে প্রবেশ করলে ফণীর কারণে আমাদের
দেশের জান-মালের ক্ষয়-ক্ষতি তুলনামূলক কম হতো, কেননা ফণী আমাদের প্রস্তুত হবার যথেষ্ঠ সময় দিয়ে ছিলো। গত ৮ দিনে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা গুলি নিজেদের সাধ্যমত প্রস্তুত করে রেখেছিল ফণীর সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবেলায়। এর আগে অন্যকোন ঘুর্ণিঝড় কোন এলাকার মানুষকে নিজেদের প্রস্তুত হবার এতো লম্বা সময় দিয়েছে বলে আমার মনে হয় না।
গত ৮দিনে ‘ফণী’ একদিকে যেমন আমাদের তার আগমীবার্তা আর প্রস্তুত হবার সময় দিচ্ছিল, অন্যদিকে আমাদের নিউজ মিডিয়া আর সোস্যাল মিডিয়ার কয়েক দিনের জ্বালানি শক্তিও দিচ্ছিল। এই জ্বালানি শক্তির তাপে, মিডিয়াগুলি বেশ গরম ছিলো। সোস্যাল মিডিয়ায় গরমের মাত্রা এতোই ছিলো যে, ফণীর যদি ফেসবুক একাউন্ট থাকতো তাহলে সে ফেসবুকে তার সম্পর্কে নানান পোষ্ট দেখে শীতল ফণী বাষ্প হয়ে আকাশে উড়ে যেতো। আর
যাওয়ার সময় স্ট্যাটাস দিয়ে যেতো “আবার আসিব ফিরে, আরও প্রবল শক্তি নিয়ে; এই বাংলায়”। ফণী আর
না আসুক এই কামনা করি।
আপনারা হয়তো ভাবছেন জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলায় দেশের মানুষ সোস্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছে আর আমি হঠাৎ এই বিষয়টিকে নেতিবাচক ভাবে নিচ্ছি কেন! আরে ভাই নেবোই না কেন বলেন? গত কয়েক দিনে যা লক্ষ করলাম তাহলো একদিকে কিছু মানুষ যখন ঘূর্ণিঝড় ফণী নিয়ে প্রয়োজনীয় প্রচারণা চালাচ্ছেন, এই ঝড়ের উপত্তি-তীব্রতা, গতি প্রকৃতি ও আঘাত হানার সময় নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বক্তব্য গুলি প্রচার করছেন। ঘূর্ণিঝড় পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে করণীয় সম্পর্কে প্রচার চালাচ্ছেন। সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলো নিজেরা কি কি ব্যবস্থা নিয়েছেন তা প্রচার করছেন। সংবাদ মাধ্যম গুলিও বিভিন্ন এলাকার ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে প্রয়োজনী খবর প্রচার করছেন। এবং অনেকেই সোস্যাল মিডিয়ার তা শেয়ার করছন। এগুলি অবশ্যই ভালোদিক, সোস্যাল মিডিয়ার উপকারী ব্যবহার।
অন্য দিকে বেশ কিছু ব্যক্তির আইডিতে দেখলাম রীতিমত অপপ্রচার। তারা ফণীর গতি ও গতিপথ আর আঘাত হানার সময় নিয়ে ভুল তথ্য দিয়ে পোষ্ট করছেন। আর পোষ্টে ব্যবহার করছেন অন্য কোন ঘূর্নিঝড়ের ছবি বা নিজেদের বানানো ছবি। অনেকেই সেগুলি কপি ও শেয়ার করছেন। কয়েকজন কে প্রশ্ন করলে উত্তরে বললেন ভাই লেখা, ছবি অনলাইন থেকে নিয়েছি। আরে
ভাই অনলাইনেতো সত্য মিথ্যা দুটোই ভাইরাল হয়, আপনার যদি সেটা বোজার ক্ষমতা না থাকে তাহলে কোন কিছু কপি বা শেয়ার করতে যান কেন। এটাতো ঠিক নয়।
অনেকে আবার সঠিক তথ্যটিই দিচ্ছেন কিন্তু কোথা থেকে তথ্যটি সংগ্রহ করলেন সেটা উল্লেখ করেন না। এতে কি হয় খবরের উৎস উল্লেখ না করলে খবরের সত্যতা বা বিশ্বস্ততা থাকেনা। বড়
বড় মিডিয়া গুলোকেতো দেখি
যে তারা খবরের উৎস উল্লেখ করেন। তাহলে আপনি কেনো কার্টেসী ছাড়া কোন লেখা বা তথ্য শেয়ার করেন। তাও আবার স্পর্শকাতর বিষয়ে, এটাতো অন্যায়। আপনার মাধ্যমে একটি মিথ্যা তথ্য ভাইরাল হলে সে তথ্যর মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ক্ষতি হতে পারে সেটা কেনো বোজেন না।
কিছু মানুষকে দেখলাম নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করে পোষ্ট দিলেন। কোন
সচেতন নাগরিক কি তা করতে পারে? বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া যেমন ওষুধ খাওয়া ঠিক নয়, তেমনি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তি ব্যতীত কোন বিষয়ে মতামত দেওয়া ঠিক নয়, নেওয়াও ঠিক নয়। সব
বিষয়ে নিজেদেরকে সবজান্তা হিসেবে পরিচয় দেয়া আমাদের অনেকের একটা মানুষিক রোগ।
যাদের এই রোগ
আছে তাদের মানুষিক ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিৎ।
অনেক ব্যক্তিকে দেখলাম ঘূর্ণিঝড় নিয়ে হাসি তামাশা করতে। মানুষের যখন কোনো বিষয়ে সঠিক তথ্য দরকার সে সময় আপনি মজা করছেন। এটা
কত বড় অন্যায় বা মানুষিক সমস্যা তা ভাবতে পারেন? বিশেষত দুর্যোগ মুহুর্তে। আপনার নিজের টাকার কেনা মোবাইল, নিজের টাকার কেনা এমবি দিয়ে আপনি যা ইচ্ছে লিখতে পারেন। তবে সেটা “অনলি মি” সেটিং দিয়ে। যাতে অন্য কেউ সেটা না দেখে। আজে
বাজে পাবলিক পোষ্ট দিয়ে আমাদের মূলবান সময় কেন নষ্ট করেন। আমরাতো ফেসবুককে একটি বই মনে মনে করে আসি, ভালো কিছু শিখতে, জানতে। আপনার নষ্ট মানুষিকতা আপনি অন্য সময় প্রয়োগ করলেইতো পারেন। আমরা না হয় তখন আপনাকে একজন জোকার/ভাড় হিসেবে মেনে নেবো।
শুনেছি বাংলাদেশে সাইবার সিকিউরিটি ইউনিট নামে একটি টিম আছে ভবিষ্যত সোস্যাল মিডিয়ায় এরকম কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা মানবসৃষ্ট দুর্যোগ বা অন্য কোন বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হবে বা কোন ছবি বা তথ্য ভাইরাল হবে তখন সাইবার সিকিউরিটি ইউনিট যাতে সঠিক তথ্য সরবারহর ব্যবস্থা রাখবে। পাশাপাশি যারা ভুল তথ্য শেয়ার করে তাদের চিহ্নিত করে তাদের আইডি বন্ধ করাসহ দোষীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থ নিতে হবে। নয়তো তিলকে তাল বানিয়ে দেশে বড় কোন বিপদ ঘটিয়ে ফেলবে একদল আধাপাগল মানুষ।
এধরনের ব্যক্তিদের আমাদের ফ্রেন্ড লিষ্ট থেকে বাদ দেয়া উচিৎ। আসুন সোস্যাল মিডিয়াকে ভালো কিছু করার মাধ্যম বানাই। কোন
ঘুর্ণিঝড় বাংলাদেশের ক্ষতি না করুক এই কমনা করি। সাবাই ভালো থাকবেন।
মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ
০৪ মে ২০১৯
0 মন্তব্যসমূহ