Ticker

6/recent/ticker-posts

কবি ও কথাসাহিত্যিক আমির হোসেন-এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

 

কবি ও কথাসাহিত্যিক আমির হোসেন-এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

বহুমাত্রিক সৃজনশীলতার সোনালী প্রবাহে জ্যোর্তিময় মেঘনা কন্যা তিতাস বিধৌত ব্রাহ্মণবাড়িয়া এক সাংস্কৃতিক উৎকর্ষিত জনপদ। অনাদিকাল ধরে শিক্ষা ও সংস্কৃতির নিবিড় মেলবন্ধনে মুখরিত এ অঞ্চল। সুর আর কবিতা এক সাথে খেলা করে এখানকার আকাশে বাতাসে। কালজয়ী ইতিহাস ঐতিহ্যের পুরুধা এ জেলাতে জন্ম নিয়েছেন বিপুল সংখ্যক ক্ষণজন্মা শিল্পী, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ সমাজসেবক, রাজনৈতিক ও প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব। আর্ন্তজাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আধ্যাত্মিক সাধক ও কবি মুন্সী ছমিরউদ্দিন, সুরের জগতে এক চিরঞ্জিব সাধক পুরুষ ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের সেই কৃর্তিমান পুরুষ উল্লাস কর দত্ত, পাকিস্তান এসেম্বিলিতে প্রথম বাংলা ভাষার দাবি উত্থাপনকারি শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত, কংগ্রেস নেতা ব্যারিস্টার এ, রসুল, দানবীর মহেষ ভট্টাচার্য, তিতাস একটি নদীর নাম নামক কালজয়ী উপন্যাসের লেখক অদ্বৈত মল্লবর্মন, বার ঘর এক উঠোন নামক বিখ্যাত লেখক জ্যোতিরিন্ত্র নন্দী, কবি আল মাহমুদ, কবি ও কথাসাহিত্যিক সঞ্জয় ভট্টাচার্য, কবি আব্দুল কাদিরসহ আরও অনেক প্রতিভাবান ও বরেণ্য ব্যক্তিত্ব যারা তাদের অকৃত্রিম কৃতিত্ব ও প্রতিভার শাণিত ইন্দ্রজালে উজ্জীবিত করে ললাটে ধারণ করেছেন কিংবদন্তীর তিলক, ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে বসিয়েছেন গর্বিত জননীর স্বর্ণ আসনে। এই গর্বিত জনপদের একটি অন্যতম অংশ নবীনগর উপজেলার মেঘনা-তিতাস-পাগলি নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত ব-দ্বীপ সাদৃশ বাইশমৌজা। শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ইত্যাদি ক্ষেত্রে অবদানের জন্য বাইশমৌজা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে ইতিহাসের অংশ। 


কালজয়ী ইতিহাস ও ঐতিহ্যের পুরুধা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী এ বাইশমৌজাতেও জন্ম নিয়েছেন বিপুল সংখ্যক ক্ষণজন্মা শিল্পী, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক, সমাজ সংস্কারক, প্রতিভাবান ও বরেণ্য ব্যক্তিত্ব যারা তাদের অকৃত্রিম কৃতিত্ব ও কর্মের দ্বারা বাইশমৌজাকে চিহ্নিত করেছেন ইতিহাসের সোনালী জনপদ হিসেবে। নিজেদের বসিয়েছেন শ্রদ্ধার স্বর্ণ আসনে। এই বাইশমৌজার একটি ইউনিয়ন কৃষ্ণনগর। কবি, কথাসাহিত্যিক, গবেষক ও সংগঠক আমির হোসেন ১৯৭৩ সালের ৫ জানুয়ারি কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের গৌরনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মো. সুরুজ মিয়া ও মাতার নাম গুলবরের নেছা। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর শিক্ষায় হাতেখড়ি। তিনি স্থানীয় কৃষ্ণনগর আব্দুল জব্বার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৯ সালে মাধ্যমিক,  ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে ১৯৯১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ১৯৯৬ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে অনার্সসহ এমএসসি ডিগ্রী অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি ২০০৩ সালে বিএড ও ২০১৫ সালে এল এল বি ডিগ্রী অর্জন করেন। 

তিতাস-পাগলি-মেঘনা নদী বেষ্টিত ব-দ্বীপ এলাকা বাইশমৌজার নদীর তীর ঘেঁষা সবুজ শ্যামলিমায় কেটেছে তাঁর শৈশব-কৈশোরের অধিকাংশ দিনগুলো। নদী আর নদী সিকয়েস্থি মানুষের গ্রামীণ জনপদ তাঁর শিরা-উপশিরায় যেমন মিশে আছে তেমনি কবিতা-গল্প-উপন্যাসে তার ছাঁয়া ফেলেছে নিবিড়ভাবে। পরবর্তী জীবন শহরে বসবাস। ফলে নানা অভিজ্ঞতা তাঁর জীবনকে করে তুলেছে বৈচিত্র্যময়। বেড়ে উঠেছেন অনেক ঘাত-প্রতিঘাত-সংঘাতের মধ্য দিয়ে। যাঁকে আমরা একজন পোঢ় খাওয়া মানুষ মনে করতে পারি।

নব্বই দশকের মাঝামাঝি থেকে তিনি লেখালেখির সাথে সক্রিয়। উল্লেখিত তিনটি নদীর জলস্নানেই ধন্য এবং গ্রামীণ জনপদে বেড়ে উঠা এ লেখকের গল্প, উপন্যাস ও অন্যান্য লেখায় তাই আমরা খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ তথা শ্রমজীবী মানুষের দেখা পাই। খাল-বিল, নদী-নালা, ফুল-পাখি ও প্রকৃতির বিভিন্ন অনুষঙ্গ তাঁর লেখায় শৈল্পিকভাবে মূর্ত হতে দেখি। মূর্ত হতে দেখি বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতির বিচিত্রসব চিত্রাবলী। বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্য, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিষয়কে তিনি তাঁর বহু লেখায় শ্রদ্ধার সঙ্গে তুলে ধরেছেন। মানুষের চেয়ে বড় কিছু নেই, নেই কিছু মহিয়ান-এ কথা তিনি মনেপ্রাণে বিশ^াস করেন এবং তাঁর চেতনায় ধারণ করেন। কবিতা, উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ, গবেষণা, গ্রন্থালোচনা, সম্পাদনাসহ বহু গ্রন্থের প্রণেতা এ লেখক নিয়মিত লেখে যাচ্ছেন দেশ ও দেশের বাইরের অসংখ্য জাতীয় দৈনিকের সাহিত্যের পাতা, শীর্ষস্থানীয় সাহিত্যের ছোট কাগজ বা লিটল ম্যাগ, সাহিত্য সংকলন ও বিভিন্ন ম্যাগাজিনে।

তাঁর প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি-নিমন্ত্রিত তমসা (কবিতা), ঝরাফুলের সুরভি (উপন্যাস), দার্শনিক কবি মাশরেকী’র জীবন ও সাধনা (গবেষণা), ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ইতিহাস (গবেষণা), জলময়ূরীর পেখম (গল্প), জলের গহীনে নীল জোছনা (কবিতা), মালালার আর্তনাদ (উপন্যাস), তোমার হরিণমায়া চোখ (গল্প), চালাক কুমির ও বোকা শেয়াল (শিশুতোষ গল্প), সিঁদুরের দেয়াল (উপন্যাস), রমেশ ঋষির সংসার (গল্প), ক্লান্তিহীন এক অভিযাত্রী মোকতাদির চৌধুরী (গবেষণা), ছোটদের বঙ্গবন্ধু (গবেষণা), সুখ নগরের সারথি (কবিতা), বাঁশির সুরে পরীর নাচ (শিশুতোষ গল্প), তিতাস পাড়ের গল্প (গবেষণা), মুক্তিযুদ্ধের গল্প (গল্পগ্রন্থ), মায়াবী মদিরাক্ষি (কবিতা), বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার (গবেষণা), অদ্বৈত’র তিতাস ও অন্যান্য প্রবন্ধ (গবেষণা) ও বৃহন্নলা (উপন্যাস), তিতাস বন্দনা (সম্পাদনা), শেখ রাসেল শৈশবে ঝরে যাওয়া ফুল (গবেষণা), হিরালী ও অন্যান্য গল্প (গল্পগ্রন্থ)। শীঘ্রই প্রকাশিত হবে-চরকেদেরখোলা (নদী ভিত্তিক উপন্যাস), একশত ত্রিশঘর জলদাস (নদী ভিত্তিক উপন্যাস), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃতিজন (গবেষণা), সাহিত্য ও সঙ্গীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া (গবেষণা), বৃক্ষের কাছে ধর্মনিরপেক্ষতা শিখি (কবিতা), পৌরানিক প্রেমের গল্প (গল্পগ্রন্থ), আলোর শহরে তমিস্রার রাত (কবিতা) ইত্যাদি।

কবি আমির হোসেন নিয়মিতভাবে স্বদেশ, মিডিয়া ওয়ার্ল্ড, চিনাইরবার্তা ডটকম, শোকাঞ্জলি ও ভাটিবাংলার খবরসহ বিভিন্ন সাহিত্য সাময়িকী সম্পাদনা করছেন। শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিকাশে এবং পাঠক সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি পাঠাগার আন্দোলনেও বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। এরই ধারবাহিকতায় তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে “চেতনায় স্বদেশ গণগ্রন্থাগার” নামে একটি সুপরিচিত গণগ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেছেন। বর্তমানে তিনি এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি বহু জাতীয় ও স্থানীয় শিল্প-সাহিত্য ও সামাজিক সংগঠনের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত রয়েছেন। তিনি সাহিত্যের বেশ কয়েকটি পত্রিকা ও সংকলনের প্রধান উপদেষ্টা, প্রধান সম্পাদক ও উপদেষ্টা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইতোমধ্যেই তিনি সাহিত্যের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের বক্তা ও আলোচক হিসেবে সুপরিচিত হয়ে উঠছেন। দেশ-বিদেশ ভ্রমণ যেন শুধুই তাঁর সখ নয়, নেশায় পরিণত হয়েছে।

তিনি ২০০৮ সালে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার (স্বজন সমাবেশ) বর্ষসেরা লেখক সম্মাননা, ২০১৩ সালে তিতাস আবৃত্তি সংগঠন সম্মাননা পদক-ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ২০১৪ সালে জননী সাহিত্য পদক-রাজশাহী, ২০১৪ সালে ইদ্রিস খান স্মৃতি সম্মাননা পদক-ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ২০১৪ সালে কবি এম. আমজাদ আলী স্মৃতি পদক-রাজশাহী, ২০১৫ সালে ‘মেঠোপথ’ সাহিত্য পদক-কিশোরগঞ্জ, ২০১৮ সালে বেস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী পুরস্কার ২০১৯ সালে সুমিতা সাহিত্যপত্র সম্মাননা-আগরতলা, ত্রিপুরা, ভারত, ২০২০ সালে কলকাতা-ঢাকা বঙ্গমৈত্রী পরিষদ কর্তৃক প্রদত্ত বঙ্গমৈত্রী পদক ও ২০২১ সালে কবির কলম সম্মাননা পদক, ২০২২ সালে ‘বঙ্গবন্ধু’ পদক,     কবি নজরুল সাহিত্য পদক’ ও মেঘনা সাহিত্য পরিষদ কর্তৃক সম্মাননা লাভ করেন।

অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী এই কবি, কথাসাহিত্যিক ও গবেষক শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের টি. কিউ. আই-সেপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আই. ই. আর. এর আওতায় সি. পি. ডি. প্রশিক্ষণের একজন মাস্টার ট্রেইনার (গণিত) হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি এশিয়াটিক সোসাইটি ঢাকা এর নিয়োগকৃত গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। 

আমরা তাঁর উত্তরোত্তর সাফল্য ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।


লেখক: মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ, প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালক, ঝিলমিল একাডেমি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।


 ছবি:-দেশ-বিদেশের বিখ্যাত ব্যক্তিদের সাথে কবি আমির হোসন

















একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ

  1. একজন সূত্রময় জীবনের মানুষ! যেখানে সূত্র দিয়ে গাণিতিক পৃথিবীকে জানান দিচ্ছেন তাঁর অগণিত ছাত্রছাত্রীদের। তাঁর জন্য সাহিত্যে আসা যেন- একজন হিসাবের মানুষের; বেহিসেবি কাজ। যা দেখে আমি খুবই বিস্মিত হয়েছি। তাঁর হাতেই হোক প্রকৃত গতিময় সাহিত্যের প্রবাহ।

    উত্তরমুছুন
  2. বর্তমান বসবাসের স্থান উল্লেখ নেই।
    আমির হোসেন সমকালীন বাংলা সাহিত্যে নিরলসভাবে লিখে স্থায়ী আসন গড়ে তুলেছেন। নতুন প্রজন্মের মাঝে এ জাতীয় লেখকদের রাষ্টীয়ভাবে তুলে ধরার প্রয়োজন। দূর্ভাগ্য লেখকদের যথাযথভাবে মূল্যায়ন জীবদ্দশায় আজও বাস্তবায়নের কোনো সঠিক পরিকল্পনা নেই।
    মানিক মজুমদার
    সভাপতি, বাংলাদেশ কবিতা সংসদ, পাবনা।

    উত্তরমুছুন