প্যাঁচ লাগানো একটা শিল্প ?
প্যাঁচ লাগানো একটা শিল্প। এই শিল্পে যারা পারদর্শী তারা প্যাঁচ লাগিয়ে লাগিয়ে নানান সুযোগ-সুবিধা নেয়। অর্থ উপার্জন করে। যেমন ধরুন জিলাপি। সুস্বাদু এই খাবারটি পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে তৈরি করে কিছু কারিগর। আর তা বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করে সে।
ক্রেতার ৩২ দাঁতের চিপায় পড়ে বেচারা জিলাপির ভীষণ নাজেহাল অবস্থা। ক্রেতারা যখন জিলাপি কিনে মজা করে খায়; জিলাপির কারিগর তখন মুচকি মুচকি হাসে আর ভাবে এই জন্যই তো আমি প্যাঁচ লাগাই। তোমার যেটাতে সাজা, আমার সেটাতে মজা।
জিলাপি তৈরির কারিগর এর মত আরো কিছু কারিগর আছে আমাদের সমাজে। যাদের কাজ হচ্ছে প্যাঁচ লাগানো। দেশে-বিদেশে, গ্রামে-শহরে, হাট-বাজারে, অফিসে-আদালতে, রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি বা সাংবাদিকতা সবখানেই তাদের সরব উপস্থিতি।
এমনকি আপনার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, পরিবার-পরিজন এর মধ্যেও এরকম প্যাঁচ লাগানো শিল্পে পারদর্শী কোন কোন ব্যক্তি আছেন বা থাকেন। যারা একে অন্যের মাধ্যে প্যাঁচ লাগিয়ে নিজের স্বার্থ সিদ্ধি করে থাকে। অনেক সময় তাদের কোনো স্বার্থ থাকেনা, শুধুমাত্র মজা নেওয়ার জন্য প্যাঁচ লাগিয়ে থাকেন কিছু মানুষ।
এই শিল্পের কারিগরদের সংখ্যা ও সহজলভ্যতা এতো বেশি যে, তাদের লাগানো প্যাঁচে পড়েননি এমন মানুষ পাওয়া মুশকিল। কোন না কোন সময় তাদের ফাঁদা প্যাঁচে পড়েছেন আপনিও। আর আমিতো হরহামেশাই প্যাঁচে পড়ি।
প্যাঁচ লাগাতে যারা পারদর্শী তারা সব কিছুতেই প্যাঁচ খুঁজে পান। তারা আপনার ভালো ভালো কাজের মধ্যেও, কথার মধ্যেও খুঁজে খুঁজে খুঁত বের করবে| সেটার মধ্যে আরো রং বং চং লাগিয়ে মানুষের সামনে এমন ভাবে উপস্থাপন করবে; যেন আপনি মহাঅপরাধী। শাস্তি আপনার অবধারিত।
জিলাপি বানাতে নাকি আড়াই প্যাঁচ লাগে। কিন্তু তাদের প্যাঁচের সংখ্যা আরো অনেক বেশি। যে লাগায় সে নিজেও জানে না এক জীবনে কত প্যাঁচ সে লাগিয়েছে। কত মানুষের কত ক্ষতি করেছে তার হিসেব তার নিজের কাছেও নেই।
যুগে যুগে রাজায় রাজায়, দেশে দেশে যুদ্ধ লাগিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন ও সম্পদ নষ্ট করেছে এই প্যাঁচ শিল্পের কারিগরগণ।
তাদের লাগোনো প্যাঁচে পরে কতজনের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়েছে, কত জনের সংসার ভেঙ্গেছে, কত জনের প্রিয় মানুষ অন্যজনের হয়ে গেছে। কত জনের ব্যবসা-বাণিজ্য, জায়গা-সম্পপ্তি, চাকরি-বাকরি, পদ-পজিশন, সাংগঠনিক অবস্থান নষ্ট হয়েছে তার ইয়াত্তা নেই।
তবে শেষ পর্যন্ত তারাও নিজেরাও যে ভালো থাকে তা কিন্তু নয়। কথায় আছে যে সাপ তলোয়ার কে পেঁচিয়ে ধরে নিজেও কেটে টুকরো টুকরো হয়। ইতিহাস স্বাক্ষি এ ধরণের লোকের শেষজীবন ভালোভাবে কাটেনি। তাদের মৃত্যুও হয়েছে নির্মম ও অপমানজনক ভাবে।
আপনি কোথাও যদি কোন রকম সমস্যার কথা শুনেন তখন জেনে রাখবেন, কেউ একজন আছেন যিনি সেখানে প্যাঁচ লাগিয়েছেন। তাকে যদি আগে খুঁজে বের করতে পারেন। তাহলে সমস্যার আপনার ৮০% সমাধান এমনিতেই হয়ে যাবে।
সুতরাং বুজতেই পারছেন যতই পারদর্শী হন প্যাঁচ লাগানো ভালো কাজ নয়। এটা শিল্প নয়, কু-শিল্প।
আপনি যদি প্যাঁচ লাগানো লোকদের মধ্যে কেউ হয়ে থাকেন, তাহলে ভাল হয়ে যান। কেননা অন্যকে নিয়ে প্যাঁচ করতে করতে একসময় আপনি নিজেও প্যাঁচের মধ্যে পড়ে যাবেন। তখন আপনার অবস্থাও ঐ জিলাপি আর সাপের মতই হবে। আর ইতিহাসে হয়ে থাকবেন খলনায়ক। কাজেই সময় থাকতে ভালো হয়ে যান। জানেন তো ভালো হতে পয়সা লাগে না।
বিঃদ্রঃ এই লেখার জন্য আমাকে প্যাঁচানো শুরু করবে কিছু মানুষ তা জেনেও লেখাটি প্রকাশ করলাম।
মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ।
টেংকেরপাড়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
১৮ অক্টোবর ২০২১খ্রি.
1 মন্তব্যসমূহ
অসাধারণ লিখেছেন কবি!
উত্তরমুছুন