Ticker

6/recent/ticker-posts

পাখি আর মানুষ ( দোষ-গুণ, সুখ-দুঃখের পার্থক্য) ছোট প্রবন্ধ

পাখিদের একটা বড়গুণ কি জানেন ?

পাখিদের বড়গুণ হলো ওরা খাদ্য সঞ্চয় করে না। 

খাদ্য সঞ্চয় না করার কারণে ওরা যথেষ্ট পরিশ্রমী হয়। প্রতিদিন ভোরে উঠতে হয় তাদের, কারণ তারা শেষ খাবার খেয়েছিলো সেই সন্ধ্যার আগে। তাই অভুক্ত পেঠ ভরাতে সূর্য ওঠার আগেই তাদের ঘুম থেকে উঠতে হয়। খাদ্যের সন্ধ্যানে তারা সারাদিন এগাছ থেকে ওগাছে, এখান থেকে সেখানে উড়াউড়ি করে। পরিশ্রমী হবার কারণে তাদের দিনের বেলা খাদ্যের অভাব হয় না।

কিন্তু পাখিরা আগের রাতে যদি খাদ্য সঞ্চয় করে রাখতো তাহলে তারা সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠত না। প্রতিদিন নিয়মিত প্ররিশ্রম করত না। ফলে তাদের শরীরে নানান রোগ-বালাই বাসা বাঁধতো। খাদ্য সঞ্চয় না করার এই গুণটি তাদের রোগের হাত থেকে বাঁচায়। তাই তাদের ডাক্তার-কবিরাজের দরকার হয় না। হাসপাতালের দরকার হয় না।

খাদ্য সঞ্চয় না করার কারণে ওদের বাসা খুব বড় করার ঝামেলা থাকে না। কোন রকমে নিজেদের শরীরটুকু রাখার মত জায়গা তাদের বাসা। সেই ছোট্ট নীড়েই তাদের সুখের সংসার। মৃত্যু ছাড়া সে সুখ কেউ কেড়ে নিতে পারে না।


খাদ্য সঞ্চয় করে না বলে তাদের বাসায় অন্য পাখি খাদ্য চুরি করতে যায় না। সামাজিক অপরাধ নেই তাদের। তাই একে অন্যের সাথে তাদের যথেষ্ট মিল। জোট বেঁধে উড়ে বেড়ায়। আর আমরা মানুষ ক্রমাগত বিভক্ত হই।

খাদ্য সঞ্চয় করে না বলে পাখিরা একে অন্যর উপর নির্ভশীল নয়। উড়তে শেখার পর পরই তারা নিজেরদের খাদ্য নিজেরাই যোগাড় করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

পরিশ্রমী হবার কারণে খাদ্যের জন্য চাকির-বাকরি বা ব্যবসার করার দরকার হয় না। যেহেতু চাকরি বা ব্যবসা করতে হয় না, তাই তাদের লেখা-পড়া করার দরকার হয়না। ফলে অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ নেই তাদের। সারাদিন তাদের কাজ আর কাজ।

কাজ করতে ভালো না লাগলে উড়াউড়ি, খেলা, আর মনের সুখে গান গেয়ে দিন কাটানো। আহা কত শান্তি ! আর আমরা মানুষ মায়ের বুকে ঘুমিয়ে থাকা শিশুটিকে জাগিয়ে তুলি স্কুলে পাঠানোর জন্য। ঘুম, খেলাধুলা আর গান গাওয়ার চেয়ে বিদ্যার্জন করা বেশি প্রয়োজনীয় আমাদের কাছে। মানুষের সুখের দিনতো বিসর্জন দিতে হয় সেই ছোট বেলাতেই। 



পাখিরা যেমন আমরা ঠিক তার উলটো। আমরা খাদ্য সংগ্রহ করি আজকের জন্য এবং আগামী অনেক দিনের জন্য। আমরা খাদ্য সংগ্রহ করি নিজের জন্য এবং আমাদের পরবর্তী প্রজম্মের জন্য। খাদ্য সংগ্রহের এই প্রক্রিয়া আমাদের স্বস্তিদায়ক জীবনকে নষ্ট করে দিয়েছে। 

সকালে আমরা কি খাবো এটা আমাদের রাত্রের যোগাড় থাকে, সে জন্য আমরা ভোরে ঘুম ওঠার প্রয়োজন বোধ করি না। অথচ ভোরে ওঠা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কত উপকারী তা আমরা সকলেই জানি।

আমরা নিজেদের জন্য অফুরন্ত খাদ্য সংগ্রহ করতে চাই। সেই অফুরন্ত খাদ্য যোগাড় করতে যেয়ে আমাদের অনেকে অবৈধ আয়ের পথ বেছে নেন। আবার সেই অবৈধ আয়ে যে পাহাড়সম অর্থ যোগাড় হয়, আমাদের পররবর্তী প্রজন্ম সেই অর্থ ব্যায় করার জন্য অবৈধ পথ বেছে নেয়। 

অর্থাৎ খাদ্য সংগ্রহের এই প্রক্রিয়া প্রজন্ম থেকে প্রজেন্ম অপরাধ স্পৃহা জন্ম দেয়। এই প্রক্রিয়ায় এক প্রজন্ম খাদ্য সংগ্রহ করতে যতটা পরিশ্রম করে, অপর প্রজন্ম ঠিক তততাই পরিশ্রম বিমুখ। ফল শ্রুতিতে এক প্রজন্ম অবৈধ টাকা জোগার করতে যেয়ে অসুস্থ, অপর প্রজন্ম কাজ না করতে করতে অসুস্থ।


সঞ্চিত খাদ্য সংগ্রহের জন্য আমাদের মজবুত বাড়ির বা ব্যাংকের দরকার হয়। বাড়ি জন্য জায়গা জমি কিনতে হয়। আর এসব কিনতে যে অর্থ দরকার সেই অর্থ যোগাড় করতে আমাদের চাকরি-ব্যবসা করতে হয়। সেই চাকরি বা ব্যবসা করার যোগ্যতা অর্জন করতে আবার লেখা পড়া করতে হয়। এসব করতে করতে আমাদের জীবনের সুখ, শান্তি, আনন্দ বিসর্জন দিতে হয়।

আবার যারা লেখাপড়া করে না, তারা তাদের খাদ্য সংগ্রহের জন্য চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই করতে হয়। কম পরিশ্রমে অধিক লাভের আশায় শুধুযে অশিক্ষিত লোকেরাই টাকায় আয়ের জন্য অবৈধ পথ বেছে নেয়; আসলে তা নয়। শিক্ষিত ব্যক্তিরাও চোর, ডাকাত হয়। সুধ, ঘুষ, দূনীর্তিতো আছেই। ফলে সমাজে অপরাধ, বিশৃঙ্খলা বাড়তেই থাকে। এসব অপরাধ-বিশৃঙ্খলা দূর করতে আইন- আদালত, থানা-পুলিশ দরকার হয়।

আমাদের লোভ তথা অতিরিক্ত খাদ্য সংগ্রহের এই প্রক্রিয়া পুরো বিশ্বের মানবজাতিকে অনেক গুলো সিস্টেমের মধ্যে যুক্ত করেছে। যে সকল সিস্টেম মানবজাতীকে অসুস্থ, অস্থির আর অসুখী করে তুলছে।



রিশ্রমই জীবনে সুখ আনে। জীবনে সঞ্চয়ী হওয়ার চেয়ে পরিশ্রমী হওয়াটা বেশি জরুরি। যে পরিশ্রম করতে জানে তার খাদ্যের বা জীবন ধারণের অন্যান্য উপকরণের অভাব হয় না। সঞ্চয়টা এমনিতেই হয়ে যায়। তার হারানোর কোন ভয় থাকে না। প্ররিশ্রমী মানুষের অসুখ-বিসুখ কম হয়। শরির সুস্থ থাকলে মনও সুস্থ থাকে।

পাখিদের সম্পদের বড়াই নেই। ক্ষমতার লড়াই নেই। সৌন্দর্যের অহঙ্কার নেই। ধর্ম, দেশ, জাতী, গোষ্ঠী, ভাষার দ্বন্দ্ব নেই। ছোট বাসা, কম খাদ্য নিয়ে অল্পতে সন্তুষ্ট থাকাটা পাখিদের আরকেটি বড়গুণ। পাখিদের মত অল্পতে তুষ্ট থাকতে চেষ্টা করুন। নির্ভয় নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়ান, প্রকৃতিকে দু-চোখ ভরে দেখুন। প্রকৃতিকে ভালোবাসুন,  ভোরে ঘুম থেকে উঠুন, পরিশ্রমী হোন, ছোট এই জীবনকে উপভোগ করুন।

সবার জীবনের প্রতিটিদিন হোক পরিশ্রমের, আনন্দের, উপভোগের।

মনিরুল ইসলম শ্রাবণ।

রচনা ১১ আক্টোবর ২০১৯খ্রি.













একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ