Ticker

6/recent/ticker-posts

দেখে এলাম তিতাসের বসন্ত বরণ উৎসব

প্রকৃতির পালাবদলে পঞ্জিকার তারিখ ঘুরে আজ ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। বসন্ত মানে গাছে গাছে বাহারি ফুলের হাসি আর ফুলে ফুলে প্রজাপতি, মৌমাছির ঝাঁক বেঁধে ওড়াউড়ি, ঘোরাঘুরি।

কোথায়, কোন বনে, কোন বাগানে, কোন গাছে ফুটেছে আজ জুঁই, চামেলি, হাসনাহেনা, গাঁদা, গন্ধরাজের দল। সরষে ফুলের কোন মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছে মধুকরের ঝাঁক। শীতের রুক্ষ, শুষ্ক মেজাজ পাল্টিয়ে প্রকৃতি কোথায় মেলে ধরেছে ভালোবাসার ডালি- সেসব আর আজ দেখা হলো না! তবে দেখে এলাম তিতাসের বসন্ত বরণ উৎসব।


তিতাস সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ- ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নেতৃস্থানীয় একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক চর্চা এবং সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বিকাশে কাজ করে যাচ্ছে এই সংগঠনটি।

সংগঠনটির বছরজুড়ে থাকে নানামুখী সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। নবীন, প্রবীণ ও শিশুদের একঝাঁক কর্মী ফাগুনে ফোটা ফুলের মতই দুলতে ও সৌরভ ছড়াতে থাকে সারা বছর। সাংগঠনিক ও নিয়মতান্ত্রিক আবৃত্তি চর্চা সংগঠনের মৌলিক কাজ হলেও সঙ্গীত, নৃত্য ‍ও উপস্থাপনায় জুড়ি মেলা ভার তাদের।


তিতাস সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদের উল্লেখযোগ্য একটি অনুষ্ঠান ‘বসন্ত বরণ উৎসব’। নানা চড়াই উতরাই পেরিয়ে ২৩ বছর ধরে এক নাগারে উদ্‌যাপন করে যাচ্ছে বাঙালির অন্যতম এই প্রাণের উৎসবটি। আয়োজনের পসরায় এবারও এর ব্যতিক্রম ছিল না।

শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরে বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮ টা চার ঘণ্টা ব্যাপী মঞ্চ মাতিয়ে রাখে তিতাসের শিল্পীবৃন্দ। এতে এই সংগঠনের বর্তমান সদস্য ছাড়াও সাবেক সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। অংশগ্রহণ করেন জেলার এই সময়ের বিভিন্ন সংগঠনের ও প্রতিষ্ঠানের কর্তা ও গুণীজনেরা। 


মঞ্চে উঠে একে একে তাঁরা বলতে থাকেন নিজেদের অভিজ্ঞতা কথা। তাদের কথায় উঠে আসে- বাঙালি ইতিহাস-ঐতিহ্য, প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র্য, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাহিত্য-সংস্কৃতি, দেশপ্রেম ও মানবতার কথা। কেউ কেউ করেন ফেলে আসা সোনালি অতীতের স্মৃতিচারণ।

কবির কণ্ঠে কবিতা পাঠ, আবৃত্তি শিল্পীদের দারাজ কণ্ঠের আবৃত্তি, রবীন্দ্র-নজরুলের বসন্ত গান, আধুনিক ও লোকসংগীতে কালজয়ী সব গান আর ক্লাসিক্যাল নৃত্যে ভাষা মঞ্চ হয়ে ওঠে একটি বসন্তের বাগান। সূর্যমুখীর মত নিজেদের পূর্ণরূপে মেলে ধরেন সংগঠনের প্রাণোচ্ছল কর্মীরা। অনুষ্ঠানের শুরু হয় একটি শোভাযাত্রার মাধ্যমে। বসন্ত উৎসবে শোভাযাত্রা জেলা শহরে এই প্রথম।


বিকেলের কোমল রোধ শরীরের দিচ্ছিল উষ্ষ আদর। সাঁঝের কুয়াশা বিদায় নিয়েছিল আট দশ দিন আগে। তাই আকাশ ঢাকার ব্যবস্থা ছিল না আজ। খোলা মাঠেই চেয়ার ফেলে বসেছিল কয়েকশ আমন্ত্রিত দর্শক। বাসন্তী, হলুদ, কমলা শাড়িতে সেজেছিল কিশোরী ও মধ্যবয়সী নারীরা। পিছিয়ে নেই তরুণরাও, তাদের পরনেও হলুদ পাঞ্জাবি। এসব দেখে মনে হলো- এইতো আমার সরষে ফুলের মাঠ।

মাঠে কোমলমতি শিশুদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। পরিচিত অপরিচিত কত মুখ। মায়া ও ভালোবাসায় ভরা প্রিয় মুখগুলোর মাঝে মনে হতে থাকলো এক গত এক যুগে হারিয়ে যাওয়া মুখগুলোর কথা।


তিতাস সাহিত্য-সংস্কৃতি পরিষদের গত এক যুগে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রায় সব কটি বসন্ত উৎসবেই কবিতা পাঠ করেছি। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। সংগঠনের কর্ণধার, বর্তমান উপদেষ্টা, বহুগুণের অধিকারী, বাচিক শিল্পী মনির হোসেন ভাইয়ের গ্রন্থনা ও পরিকল্পনায় এবারও সফল ও নান্দনিক আয়োজন হয়েছে।

এই উৎসব ধারাবাহিকতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন সুধীজনরা। সংগঠনের সাবেক সদস্য হিসাবে আমারও কামনা তিতাস সাহিত্য-সংস্কৃতি পরিষদ এগিয়ে যাবে আরো বহুদূর। সকলকে বসন্ত, ভালোবাসা দিবস ও সরস্বতী পূজার শুভেচ্ছা রইল।


শুভেচ্ছাসহ

মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া

১৪ এপ্রিল ২৪


বিশেষ কৃতজ্ঞতা: হেলাল উদ্দিন হৃদয় ভাই (উপস্থাপক)

রুদ্র মুহাম্মদ ইদ্রিস ভাই (সমন্বয়ক- কবিত কণ্ঠে কবিতা পর্ব)

ছবি কৃতজ্ঞতা: রিপন দেবনাথ ভাই

ভিডিও কৃতজ্ঞতা: মিনহাজ শাহরিয়ার রাসেল।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ