ভূমিকম্পের সময় আমাদের করণীয়
মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ
ভূমিকম্প শব্দটি শুনলেই আমাদের মনে ভীষণ ভয় জেগে ওঠে। এই বুজি ভূমিকম্প শুরু হলো। এই বুজি দালান-কোঠা ভেঙে সব মাথায় পড়লো। আর তার নিচ আমরা চাপা পড়লাম। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশে ভয়াবহ তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে। আর সেই তাণ্ডবে অসংখ্য মানুষ ও প্রাণীর প্রাণহানি, পরিবেশ এবং সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। তাই ভূমিকম্পের কথা শুনলেই আমাদের ভয় লাগাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা যদি একটু সর্তক থাকি আর কিছু নিয়ম মেনে চলি তাহলেই ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি অনেকটা কমিয়ে আনা যাবে। কবে, কোথায় ভূমিকম্প হবে তা যেহেতু পূর্বে থেকে জানা যায় না, তাই ভূমিকম্প চলাকালীন সময়ে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। যা আমাদেরকে ভূমিকম্পের কারণে বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করবে।
বাংলাদেশে সম্প্রতি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) এর করা সমীক্ষায় কর্মকর্তারা বলছেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়েছে। বাংলাদেশের অবস্থান দুটি বিপজ্জনক ফল্টলাইন বা চ্যুতিরেখার ওপরে। একটি ঢাকা মহানগরের সবচেয়ে কাছে টাঙ্গাইলের মধুপুর চ্যুতিরেখা, অন্যটি সিলেট অঞ্চলের ডাউকি চ্যুতিরেখা।
গবেষকরা বলেন, টাঙ্গাইলের মধুপুরে মাটির নিচে যে চ্যুতিরেখা রয়েছে, সেখানে ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকায় ৮ লাখ ৬৫ হাজার ভবন ধসে পড়বে। দিনের বেলায় এ ভূমিকম্প হলে ঢাকায় মারা যেতে পারেন ২ লাখ ১০ হাজার মানুষ, আহত হবেন ২ লাখ ২৯ হাজার। ভূমিকম্পে আর্থিক ক্ষতি হবে ২ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা। ভূমিকম্পের পর ভবন মেরামত ও পুনর্নির্মাণে সরকারকে ব্যয় করতে হবে প্রায় ৪ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা।
কাজেই ভূমিকম্প প্রতিরোধ করা না গেলেও, এর সম্ভাব্য ক্ষয়-ক্ষতি থেকে বাঁচতে আমাদের ভূমিকম্পের চলাকালীন নিয়মাবলি অবশ্যবই মেনে চলতে হবে। আসুন ভূমিকম্পের সময় আমাদের করণীয় সর্ম্পকে জেনে নেই।
ভূমিকম্পের সময় আমাদের করণীয়
★ ভূকম্পন অনুভূত হলে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না।
★ ভূকম্পনের সময় বিছানায় থাকলে বালিশ দিয়ে মাথা ঢেকে টেবিল, ডেস্ক বা শক্ত কোন আসবাবপত্রের নিচে আশ্রয় নিতে হবে।
★ রান্না ঘরে থাকলে গ্যাসের চুলা বন্ধ করে দ্রুত বেরিয়ে আসতে হবে।
★ বীম, কলাম ও পিলার ঘেঁষে আশ্রয় নেওয়া বেশি সুবিধাজনক।
★ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবস্থানকালে স্কুল ব্যাগ মাথায় দিয়ে শক্ত বেঞ্চ অথবা শক্ত টেবিলের নিচে আশ্রয় নিতে হবে।
★ ঘরের বাইরে থাকলে গাছ, উঁচু বাড়ি, বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে দুরে খোলাস্থানে আশ্রয় নিতে হবে।
★ গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, হাসপাতাল, মার্কেট ও সিনেমা হলে থাকলে বের হওয়ার জন্য দরজার সামনে ভিড় কিংবা ধাক্কাধাক্কি না করে দুহাতে মাথা ঢেকে বসে পড়তে হবে।
★ ভাঙা দেয়ালের নিচে চাপা পড়লে বেশি নড়াচড়ার চেষ্টা না করে কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রাখতে হবে, যাতে ধুলোবালি শ্বাসনালীতে না ঢুকতে পারে।
★ ভাঙা দেয়াল বা ধ্বংসস্তুপের নিচে নিচে আটকা পড়লে কোন ধাতব পদার্থ দিয়ে থেমে থেমে শব্দ করতে হবে। যাতে উদ্ধারকারীরা শব্দের উৎস খুঁজে নিয়ে আপনাকে উদ্ধার করতে পারে।
★ একবার কম্পন হওয়ার পর আবারও কম্পন হতে পারে। তাই সুযোগ বুঝে বের হয়ে খালি জায়গায় আশ্রয় নিতে হবে।
★ উপর তলায় থাকলে কম্পন বা ঝাঁকুনি না থামা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে; তাড়াহুড়ো করে লাফ দিয়ে বা লিফট ব্যবহার করে নামা যাবে না।
★ কম্পন বা ঝাঁকুনি থামলে সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে পড়ুন এবং খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিন।
★ গাড়িতে থাকলে ওভারব্রিজ, ফ্লাইওভার, গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে দূরে গাড়ি থামান। ভূকম্পন না থামা পর্যন্ত গাড়ির ভিতের থাকুন।
★ ব্যাটারিচালিত রেডিও, টর্চলাইট, পানি এবং প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম বাড়িতে রাখবে হবে।
★ সর্বোপরি বিল্ডিংকোড মেনে ভবন নির্মাণ করতে হবে।
তথ্যসূত্র:
০১. জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্য বাতায়ন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
০২. উইকিপিডিয়া বাংলা
০৩. বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া।
লেখক: মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ
প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালক, ঝিলমিল একাডেমি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
মোবাইল: ০১৭১৭-০৯৫৭৫১
ই-মেইল: mishrabon@gmail.com
0 মন্তব্যসমূহ