Ticker

6/recent/ticker-posts

৪০৮০ দিন বয়সী একটি ছবির গল্প


৪০৮০ দিন বয়সী একটি ছবির গল্প

মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ

তখন কাজ করি দৈনিক দিনদর্পণ পত্রিকায়। পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক নজরুল ইসলাম শাহজাদা ভাই একদিন বললেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা সমিতি-ঢাকার একটি অনুষ্ঠানের নিউজ কভারেজের জন্য তোমাকে ঢাকা যেতে হবে।

আমি তখন ঝিলমিল সংগঠন আর নিউজ নিয়েই দৌড়াদৌড়ি করি। যেতে সমস্যা নাই। আমি রাজি হলাম। তবুও সৌজন্যতা করে জিজ্ঞেস করলাম ভাই আপনি যাচ্ছেন না কেন। তিনি বললেন ঐদিন প্রেসক্লাব সদস্য তাদের পরিবারবর্গের প্রীতি সম্মিলনী তাই আমি যেতে পারবো না।

যাইহোক পূর্ব কথামতো ঢাকা যাওয়ার আগের দিন সন্ধ্যায় শাহজাদা ভাইয়ের ট্যাঙ্কেরপাড়ের বাসায় দেখা করলাম। তিনি আমাকে তার ডিজিটাল স্টিল ক্যামেরা, যাতায়াত খরচসহ সমিতির ঠিকানা সভাপতি হুমায়ুন কবির খানের ফোন নাম্বার দিলেন।

তখন জেলা শহরে হাতে গোনা কয়েকজনের কাছেই ডিজিটাল ক্যামেরা ছিলো। শাহাজাদা ভাই যার অন্যতম। তিনি সেটা খুব যত্ন সহকারে ব্যবহার করতেন। তিনি আমাকে ক্যামেরার কয়েকটি অপশন শিখিয়ে দিলেন।

পরদিন ভোরবেলা তিতাস ট্রেনে চড়ে রওনা দিলাম ঢাকা। ট্রেন থেকে নেমে মগবাজার দিলফেঁশা টাওয়ারে আসলাম।

অনুষ্ঠান শুরুর কিছু আগেই উপস্থিত হয়েছিলাম সেখানে। সংগঠনের সভাপতিসহ অন্যান্যদের কাছে নিজের পরিচয় দিলাম। কিছুক্ষণ পর একে একে অতিথিগণ আসলেন। দেখলাম তৎকালীন আইনপ্রতিমন্ত্রী অ্যাডঃ কামরুল ইসলাম মহোদয়, আমাদের সদ্য নির্বাচিত মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি মহোদয়, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জহিরুল হক খান বীরপ্রতীকসহ আরো অনেক গুণীজন ছিলেন, যাদের আমি চিনি না। বেশ কিছু কলেজ বন্ধুদেরকেও সেখানে দেখলাম। লেখাপড়ার জন্য তখন তারা ঢাকায় অবস্থান করছিল।

অনুষ্ঠান শুরু হলে ছবি তোলা এবং নিউজ এর তথ্য নোট করে নিলাম।

অনুষ্ঠানের পরে নামাজের সময় হলে কয়েকজন অন্য কোথাও নামাজ পড়তে চলে গেলেন। এই সময় দেখলাম মাননীয় প্রতিমন্ত্রী মহোদয় অনুষ্ঠানস্থলেই পশ্চিমমুখ করে চেয়ারে বসেই নামাজ পড়লেন। আমি একটু অবাক হলাম। মন্ত্রীরা নামাজ পড়েন এটা তখন কেন যেন আমার ধারণার বাইরে ছিল। সত্যি বলতে এর আগে কাছ থেকে কখনো কোন মন্ত্রীমানব দেখি নাই, তাই হয়তো।অনুষ্ঠান শেষে সবাইকে আপ্যায়ন করা হলো। অনুষ্ঠান শেষে চলে আসলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

পরদিন সেই নিউজ তৈরি করে শাহজাদা ভাইয়ের কাছে দিলাম। তিনি প্রয়োজনীয় সংশোধনী করে নিলেন। এর একদিনপর জেলা শহরের সব পত্রিকায় সেই নিউজ প্রেসরিলিজ আকারে ছাপা হলো।

আপলোডকৃত এই ছবিটা ঐদিন তোলা হয়েছিল। এতগুলো ভিআইপি লোকজনকে কাছে পেয়ে তাদের সাথে ছবি তোলার লোভ সামলাতে পারছিলাম না। তাই অন্যদের মতো আমিও পিছনে দাঁড়িয়ে এই ছবিটা তুলেছিলাম। ছবিটির কথা একদম ভুলে গিয়েছিলাম। ছবিটি কে তুলেছিল জানিনা। মাস দুয়েক আগে এটি ফেসবুকে পাই। ছবিটি আপলোড করে HM Abdullah Al Mamun

তার সাথে যোগাযোগ করে অরজিনাল সাইজটি সংগ্রহ করি। আজকে ২৩ সেপ্টেম্বর ছবিটির বয়স ১১ বছর দুই মাস। দিন গণনায় ৪০৮০ দিন।

ছবির ক্যাপশন লিখতে যেয়ে ১১ বছর আগের স্মৃতি লিখে ফেললাম। পুরনো স্মৃতিকে ঝালাই দিতেই মাঝে মাঝে আমি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্মৃতিচারণ করে থাকি। যা আমার সাহিত্যচর্চার অন্যতম একটি অংশ।

স্মৃতিচারণ লিখতে গিয়ে মনে হলো আমার সংগ্রহে থাকা পুরনো পত্রিকায় এই নিউজের কপি পাবো। ঘন্টাখানেক চেষ্টা করে অবশেষে পেয়ে গেলাম কাঙ্খিত পত্রিকাটি। নিউজ পড়ে দু একটি তথ্য আপডেট করে নিলাম।

এই এক ঘন্টা পুরনো ফাইল আর পত্রিকা খুঁজতে খুঁজতে আরো হারিয়ে যাওয়া অনেক নিউজ আর স্মৃতি চোখের সামনে পড়লো। হয়তো সেগুলো নিয়ে আবার কখনো কিছু লেখা হবে।


প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি, কবির কলম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
তিতাসপাড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ খ্রি.
ই-মেইল mishrabon@gmail.com

 


 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ