Ticker

6/recent/ticker-posts

কবি ও নাট্যজন আবদুল মান্নান সরকার-এর বর্ণাঢ্য জীবন ও কর্ম

কবি, নাট্যজন ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব 
আবদুল মান্নান সরকার-এর বর্ণাঢ্য জীবন ও কর্ম

মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ


জন্ম ও শৈশবকাল:

বিশিষ্ট কবি, নাট্যজন ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জনাব আবদুল মান্নান সরকার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মেঘনা তিতাসের যুগলবন্দি ডোলভাঙ্গা নদীর পাশে অবস্থিত দরিয়াদৌলত গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জন্ম তারিখ ১ এপ্রিল ১৯৪৯ খ্রি.। তাঁর ডাক নাম মনু। পিতার নাম: মরহুম কালু মিয়া সরকার, মাতার নাম: মরহুমা তৈব্বতেন্নেছা। বাবা মায়ের একমাত্র পুত্রসন্তান আবদুল মান্নান সরকার ছোটকাল থেকেই পরিচ্ছন্নভাবে বেড়ে ওঠেন। 

শিক্ষাজীবন, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক মানস:

কবি আবদুল মান্নান সরকারের বাড়ির সীমানা ঘেঁষা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দরিয়াদৌলত আবদুল গণী উচ্চ বিদ্যালয়। এ দুটো স্কুলে ১ম শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রথম স্থান অধিকার করে লেখাপড়া করেন তিনি। ৪র্থ শ্রেণিতে পড়াকালীন সময়ে তাঁর প্রিয় শিক্ষক মরহুম আব্দুল মতিন সরকারের উৎসাহ-উদ্দীপনায় সাহিত্য-সংস্কৃতি ও খেলাধুলার সাথে যুক্ত হোন তিনি।

৫ম শ্রেণিতে অধ্যয়নের শেষ দিকে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার প্রাইমারি শিক্ষা কর্মকতা (টি.ই.ও) সংস্কৃতিমনস্ক ব্যক্তিত্ব মরহুম মো. ইদ্রিস আলীর ঐকান্তিকতায় সপ্তাহব্যাপী প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে ক্রীড়া-সংস্কৃতি উৎসবের আয়োজন করা হয়। সেই উৎসবে ছোট মনু তাঁর প্রিয় শিক্ষক মরহুম আব্দুল মতিনের পরিচালনায় ‘বুনিয়াদ’ নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘রতন’ এর ভূমিকায় অভিনয় করে আবাল-বৃদ্ধা-বনিতার ভূয়সী প্রশংসা লাভ করেন। তাছাড়া অবৃত্তি, কৌতুক, গজল, সংগীত ও খেলাধুলায় আধিপত্যের কারণে সেরা শিশুশিল্পী হিসেবে গৌরব অর্জন করেন।

৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁর প্রিয় শিক্ষক মরহুম সাইফুদ্দিন সাহেবের অনুপ্রেরণায় কবিতা লিখতে শুরু করেন। তৎকালীন দরিয়াদৌলত আব্দুল গণী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মরহুম আব্দুল আজীজের মুন্সিয়ানা পরিচালনায় প্রতি বছর একটি নাটক মঞ্চস্থ হতো। নাটক এবং যাত্রা অনুষ্ঠানে তিনি ছিলেন সবার ঈর্ষার পাত্র। ৯ম শ্রেণিতে অধ্যয়নের সময় তিনি একক প্রচেষ্ঠায় দেয়াল পত্রিকা বের করে সৌরভ বৃদ্ধি করেন, তা আজও অমলিন। বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মরহুম আব্দুর লতিফ স্যারের অনুপ্রেরণায় জীবনের পঠিত প্রথম উপন্যাস ‘গুডআর্থ’। তিনি কিশোর বয়স থেকে গ্রামের সিনিয়র ফুটবল ও ভলিবল টিমে জায়গা করেন এবং বিভিন্ন গ্রামে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতামূলক খেলায় অংশগ্রহণ করে পুরস্কার ও সম্মান লাভ করেন। কলেজ জীবনে জগন্নাথ কলেজের ভলিবল টিমে সুযোগ পান এবং জাতীয় ভলিবল লীগে খেলেন। 

রাজনৈতিক জীবন:

স্কুল জীবনেই তিনি বাঞ্চারামপুর উপজেলার চেয়ারম্যান জনাব সিরাজুল ইসলাম কর্তৃক জীবনগঞ্জ বাজার বটতলায় প্রদত্ত ভাষণ শুনে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ১৯৬৫ সালে এসএসসি পাশ করে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ কলেজে একাদশ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। কলেজ জীবনেও স্কুল জীবনের প্রতিফলন ঘটে তাঁর। প্রাক্তন মন্ত্রী রাজি উদ্দিন আহমেদ রাজু, রেজা শাহজাহান, কাজী ফিরোজ রশিদ প্রমুখের সংস্পর্শে এসে তাঁর রাজনৈতিক চেতনা আরো শানিত হয়। ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে তিনি বেশ সক্রিয় ছিলেন। শহিদ মতিউরের লাশ নিয়ে মিছিলসহ বিভিন্ন মিছিল মিটিংয়ে তাঁর বন্ধু শাহ আলমকে নিয়ে যোগ দিয়ে ছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি গ্রামে চলে আসেন এবং থানা সদরের খোশকান্দি গ্রামের ইঞ্জিনিয়ার নুরুল ইসলাম ও দশদোনা গ্রামের রাজনীতিবীদ জাহাঙ্গীর আলম এর সাথে একাত্মতা হয়ে জনমত গঠনে বক্তৃতা দিয়ে বেড়াতেন। 

১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনেও তাঁর ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। চাকুরি থেকে ছুটি নিয়ে তিনি গ্রামে চলে আসতেন এবং বন্ধুবর প্রয়াত বোরহান মাস্টার, স্নেহভাজন প্রয়াত শফিকুল ইসলাম (উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান), প্রয়াত জাকির হোসেন সিকদার, আক্তার হোসেন সিকদার, মুক্তিযোদ্ধা কামরুল হাসান জিতু, বন্ধুবর প্রয়াত আবুল কাসেম মাস্টার, মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম হিরণ, নুরুল মোমেন বাচ্চু, বাচ্চু শিকদার, হেলাল খন্দকার, প্রয়াত জয়নাল মাস্টার, ফরহাদ মোল্লা, শহিদ মোল্লা,  প্রয়াত আতাউর রহমান (ব্যাংকার) প্রমুখদের নিয়ে নৌকা মার্কার পক্ষে জনমত তৈরিতে নেতৃত্ব দেন এবং গ্রামের একাত্মতা নিশ্চিত করেন।

২৫ মার্চ ১৯৭১ এর কালোরাতের আগের দিন বিকালে দরিয়াদৌলত আব্দুল গণী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তৎকালীন এম.এন.এ মরহুম অ্যাড. দেওয়ান আব্দুল আব্বাছ বাচ্চু ও এমপিএ মরহুম মহিউদ্দিন আহমেদ আফতাবকে নিয়ে এক বিশাল জনসভা আয়োজন করা হয়। সেই সভার সঞ্চালক ছিলেন কবি আবদুল মান্নান সরকার। পরদিন থেকে পূর্বে উল্লিখিত ব্যক্তিদেরকে নিয়ে ঢাকা থেকে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসা মানুষের সেবায় ব্রতী হন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তিনি এলাকার যুবকদের উদ্বুদ্ধ করে মুক্তিযুদ্ধে পাঠান। অতিশয় বৃদ্ধ পিতামাতার একমাত্র সন্তান ও কোলে শিশুসহ স্ত্রীর কারণে তিনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পারেন নাই, যা তাঁর জীবনের এক অতৃপ্তি। দরিয়াদৌলত গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প স্থাপিত হলে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের খাওয়া দাওয়া ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন। 


চাকুরি জীবন:

১৯৬৯ সালে বি.এস.সি পাশ করার পর ঐ বছরের ডিসেম্বরে সরকারি ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, চাঁদপুর-এ বিজ্ঞান প্রশিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। সেই সাথে দরিয়াদৌলত আব্দুল গণী হাই স্কুলে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে শিক্ষকতা করতেন। ১৯৮৫ সালে তিনি দরিয়াদৌলত আব্দুল গণী উচ্চ বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সহ-সভাপতি পদে নির্বাচিত হন এবং পর পর দুইবার এই দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করেন। চাকুরি জীবনেও তিনি একজন আদর্শ ও সংগ্রামী শিক্ষক-কর্মকর্তা হিসেবে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরসহ দেশের প্রত্যেকটি ডি. টি. আই তথা টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে পরিচিত ছিলেন। তিনি প্রথম নির্বাচিত সিনিয়র সহ-সভাপতি। পরে বাংলাদেশ ভোকেশনাল কারিগরি শিক্ষক সমিতির সভাপতি হিসেবে অবসরকালীন সময় পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের নতুন নাম টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ। এস.এস.সি ভোকেশনাল ও এইচ.এস.সি ভোকেশনাল চালু করার ব্যাপারে তাঁর সংগ্রামী ভূমিকা ভোকেশনাল শিক্ষা ব্যবস্থায় চির অমলিন হয়ে থাকবে। তিনি ৩৭ বছর সরকারি চাকুরি শেষে ২০০৭ সালে ভৈরব টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে সিনিয়র সায়েন্স ইন্সপেক্টর (সিলেকশন গ্রেড) হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।

নাটক ও সাহিত্য-সংস্কৃতি:

ছোটকাল থেকেই সাহিত্য-সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও নাটকের প্রতি ছিল একটি বিশেষ আকর্ষণ। কলেজ জীবন থেকে চাকুরি জীবন ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত যখনই গ্রামে আসতেন, তখনই গ্রামকে উৎসব মুখর করতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ক্রীড়া অনুষ্ঠান, নাট্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন। সেই সময়কার অনেক নাটকের কথা এখনও এলাকাবাসীর স্মৃতিতে অম্লান। নাট্য জীবনে গ্রামের প্রখ্যাত নাট্যকার প্রয়াত রমেশ দাসের কাছে তিনি আজীবন কৃতজ্ঞ। এমএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পরপরই তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যুব কল্যাণ নাট্য সমিতি।


১৯৭২ সাল থেকেই সাহিত্য-সংস্কৃতির রাজধানী বলে খ্যাত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ক্রীড়া ও সংস্কৃতি অঙ্গনের সাথে যুক্ত হন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রথমে তিনি বন্ধুবর জিল্লুর রহমান ও জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে ‘সুকান্ত স্মরণে’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বরেণ্য সন্তান, জাতির গর্ব, গণ-অভ্যুত্থান ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রসেনানী জাতীয় বীর অব্দুল কুদ্দুস মাখন। তাঁর স্মৃতি চারণ থেকে যতদূর জানা যায়, তিনি ১৯৭৩ সালে বিশিষ্ট চিকিৎসক ও শিক্ষা অনুরাগী ব্যক্তিত্ব ডা. ফরিদুল হুদার সাথে পরিচিত হন। ডা. ফরিদুল হুদা তাঁকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ভাইরোটেশন ভলিবল খেলা পরিচালনায় দায়িত্ব দেন। তিনি সেই টিম নিয়ে কুমিল্লা জেলা ভিত্তিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। ডা. সাহেবের সুবাদে সেই সময়ের এসডিও মেলাগুলোতে অন্যতম ক্রীড়া পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। প্রয়াত ডা. ফরিদুল হুদা একসময় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে তাঁর প্রথম অভিনীত নাটক ‘এক মুঠো অন্ন চাই’। প্রযোজনায় ছিল অগ্রণী সংসদ মেড্ডা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া। নাটকটি পরিচালনা করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পরিচিত মুখ, প্রয়াত আব্দুর রহমান শমশেরী। তাঁর কর্মস্থল ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট সুপারিনটেনডেন্টর দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠানে ‘সাগর সেঁচা মানিক’ নাটকটি মঞ্চস্থ করেন। তারপর তিনি যুক্ত হন গ্রুপ থিয়েটারের আলোকে গড়ে ওঠা ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাট্য সংস্থা (ব্রানাস) এর সাথে। ‘ওরা কদম আলী’ নাটক দিয়ে ব্রানাস পরিবারের তাঁর অগ্রগতি সূচিত হয়। ব্রানাসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রণয় ভূষণ বর্দ্ধন ও সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল আলম-এর সাথে জুটিবদ্ধ হয়ে ‘ওরা আছে বলেই’, ‘চারিদিকে যুদ্ধ’, ‘সূবর্ণ সংকেত’, ‘দার্শনিক কনফারেন্স’, ‘এখনও কৃতদাস’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’সহ বহু নাটকের দুরূহ চরিত্রে দাপটের সাথে অভিনয় করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাট্যজগতে একজন মহিরুহ ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। অধ্যাপক একেএম হারুন অর রশিদসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সেসময়ের খ্যাতিমান অনেক ব্যক্তিবর্গের সাথে মঞ্চে পারফর্মেন্স করেন তিনি। ব্রানাস-এর পরিবেশনায় নাটকগুলোর শো-এর সংখ্যা প্রায় ৬০০ যা মফস্বল এলাকায় ছিল বিরল দৃষ্টান্ত। তাছাড়া তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত ‘পালা বদলের পালা’ এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নাট্যাংশে অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেন। প্রামাণ্যচিত্র ‘বাংলার কৃষক ও খনন’ এ অভিনয় করেছিলেন।


সাংগঠনিক কার্যক্রম:

তাঁর অনন্য কৃতিত্ব হল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গর্বিত সন্তান, উপ মহাদেশের সুরের গর্ব, সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সাহেব কর্তৃক উস্তাদজি'র শহরস্থ বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত ‘সুরসম্্রাট দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন’ নামক প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হওয়া এবং দেশে-বিদেশে সর্বমহলে-এর পরিচিতি প্রতিষ্ঠিত করা। ১৯৯০ সাল থেকে এর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৯৩ সাল থেকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩১ বছর তাঁর সততা, নিষ্ঠা ও সাংগঠনিক মুন্সিয়ানা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম অর্জন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সংস্কৃতি জগতে নিজেকে শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত করেন। বর্তমানে তিনি সুরসম্্রাট দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গনের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন

তিনি বর্তমান সময়ে যে সকল সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট আছেন। সংক্ষিপ্ত আকারে এখানে উল্লেখ করা হল। 

উপদেষ্টা:

জেলা নাগরিক কমিটি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, তিতাস সাহিত্য-সংস্কৃতি পরিষদ, শিশু মেলা,  সাহিত্য প্রকাশনা পরিষদ, জেলা নাগরিক ফোরাম, ঝিলমিল একাডেমি, জেলা উন্নয়ন পরিষদ, ঢাকা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক জাতির আলো, কিশোরগঞ্জ থেকে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকা ‘স্বদেশ বার্তা’, আমার চ্যানেল আই দর্শক ফোরাম।  


সভাপতি:
জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখা, বঙ্গীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাট্য সংস্থা (ব্রানাস), প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি, ব্রাহ্মণবাড়িয়াস্থ বাঞ্ছারামপুর সমিতি। প্রকৃতি ও জীবন ক্লাব, জেলা শাখা। 

অন্যান্য:

সাবেক সভাপতি জাতীয় কবিতা পরিষদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখা। সহ-সভাপতি, সুরসম্্রাট দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গান, সহ-সভাপতি, সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক, জেলা শাখা) সাবেক সহ-সভাপতি মূখ ও বধির নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। আজীবন সদস্য বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইউনিট। সদস্য: সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখা,  ইত্যাদি।

প্রকাশনা ও লেখালেখি:

তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘হৃদয় জমিনে তাজমহল’, নাটক ‘ফরিয়াদ’ পাঠক জগতে সাড়া জাগিয়েছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তাঁর লেখা কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, গীতিকাব্য, নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। তাঁর লেখা প্রায় ৩০০ গান নিয়ে ‘ছন্দ সুরের মিতালী’ প্রকাশের অপেক্ষায় আছে। তার নিজের এবং অন্যের সুরকরা গানগুলো ইতোমধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। 

পুরস্কার ও সম্মাননা:

কবি আবদুল মান্নান সরকার তাঁর বর্ণাঢ্য কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ নাট্যকলায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার (২০১৪), তিতাস সাহিত্য-সংস্কৃতি পরিষদ প্রদত্ত সম্মাননা, অঙ্কুর শিশু-কিশোর সম্মাননা (২০২৩), বৈশাখি শিল্প গোষ্ঠী সম্মাননা (২০২৩), পিস ভিশন সম্মাননা (২০২২) লাভ করেন।

পারিবারিক জীবন:

কবি আবদুল মান্নান সরকার বর্তমানে শহরের পশ্চিম পাইকপাড়াস্থ তাঁর নিজস্ব ভবন ‘সরকার মঞ্জিল, ১১৭৫-এ’ স্ত্রী বেগম আয়েশা সরকার ও পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন। তাঁর তিন ছেলে দুই মেয়ে। সবাই সুপ্রতিষ্ঠিত ও ঘর সংসার করছেন। কবির দুঃখবোধ এই যে, অর্থের অভাবে তিনি নিজ জন্মভিটায় দারুণভাবে উপেক্ষিত।

শেষকথা:

কবি আবদুল মান্নান সরকার তাঁর সততা দিয়ে, সাংগঠনিক মুন্সিয়ানা দিয়ে, নতুন মাত্রার সৃজনশীলতা দিয়ে, তুখোড় অভিনয়শীলতা দিয়ে, সামাজিক-সাংস্কৃতিক পৃষ্টপোষকতা দিয়ে, ঐতিহ্যবাহী ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরবাসীর শ্রদ্ধার আসন অলংকৃত করেছেন। জেলার কৃতীসন্তান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সামাজিক সাংস্কৃতিক অঙ্গন তাঁকে একজন ঋদ্ধ অভিভাবক হিসেবে অভিহত করে। ফলশ্রুতিতে দেখা যায়, প্রতিশ্রুতিশীল সংগঠন তিতাস সাহিত্য-সংস্কৃতি পরিষদ গত এক যুগ ধরে কবি আবদুল মান্নান সরকারে জন্মদিন ঘটা করে পালন করে। পরবর্তীতে ব্রানাস, দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন, জেলা নাগরিক ফোরাম আলাদা আলাদা আয়োজন করে জন্মদিনে উৎসবে মুখর আমেজ এনে দেয়। কবি আবদুল মান্নান সরকার মনে করেন সাহিত্য-সংস্কৃতি মানে শুদ্ধ হওয়া, সৎ হওয়া এবং স্বচ্ছ হওয়া। তাই তাঁর দীপ্ত শপথ: আজীবন সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সামাজিক অঙ্গনে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে কাজ করে যাওয়া।

সতর্কতা: এই লেখাটিতে প্রয়োজনীয় আপডেট করা বাকী আছে। তাই লেখকের অনুমতি ব্যতীত এই লেখার সম্পূর্ণ বা আংশিক অংশ কপি করা নিষিদ্ধ। কোনো তথ্যে ভুলভ্রান্তি পরিলক্ষিত হলে বা নতুন তথ্য সংযোজিত করতে চাইলে লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হলো।

(শিশু-কিশোর সাময়িকী স্বপ্ন সিঁড়ির পঞ্চম সংখ্যার জন্য নেয়া সাক্ষাৎকার অবলম্বনে। সাক্ষাৎকার গ্রহণ: মার্চ ২০১২ খ্রি. )

কবি আবদুল মান্নান সরকারের সাথে মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ


আমরা তাঁর দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনা করছি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ