জন্মদিন উপলক্ষ্যে তিন দিনের ছুটি কাটিয়েছে এবার। আজ সারাদিন ঘুরেছে মিরপুর চিড়িয়াখানা। কাল পরশুও ঘোরাঘুরির সিডিউল রেখেছে। কয়েকদিন আগে পরপর দুবার কক্সবাজার ঘুরে এসেছে।
ওর ছোটবেলায় আমি ছিলাম ওর পৃথিবী। এখন ওর পৃথিবীতে আরও অনেক কিছু যুক্ত হয়েছে। বাবা-মাতো আছেই সঙ্গে ছোট ভাই, ভাইয়ের দুষ্টুমি, পড়াশোনা, মা'র কাজে সহযোগিতা করা, ঘোরাঘুরি, মোবাইল গেম, কার্টুন দেখা, ছবি আঁকা, হ্যান্ডকার্ফ্ট, এসব নিয়েই ব্যস্ত থাকে সে।
আগের মত আমার সাথে বেশি বেশি কথা বলে না। মাঝে মাঝে তাসফিয়ার সাথে কথা বলে। আমাকে মাঝে মাঝে টেক্স করে। বছরখানেক আগে যখন আমাকে মেসেজ লিখে পাঠালো 'হাই মামা - কেমন আছো' আমি তো অবাক! ওর মাকে জিজ্ঞেস করলাম 'তুই কি মেসেজ লিখে দিয়েছিস' ওর মা বলল না। সে নিজে নিজেই মেসেজ লেখা শিখে ফেলেছে।
করোনা কালে লেখাপড়ায় ছন্দপতন ঘটলে মাদ্রাসায় ভর্তি হয়। এখন পর্যন্ত মাদ্রাসাতেই পড়ছে। এছাড়াও অনলাইনে বাংলা, ইংরেজিও শিখছে। মাদ্রাসায় পড়ে বলে আগেরমত ওর ছবি ফেসবুকে দেই না।
সারা এখন আমার সাথে খুব বেশি কথা না বললেও ওর ছোট ভাই সাদ এখন মামা বলতে অজ্ঞান। সারাকে আমি যে পরিমাণ সময় দিয়েছি, আদর করেছি, সাথে নিয়ে ঘুরেছি, খেলেছি, এর সামান্য অংশ সাদকে করার সুযোগ পাইনি। কারণ সাদের জন্মের আগে থেকেই ওরা ঢাকায় শিফট হয়েছে। ফলে সাদকে সেভাবে সময় দেওয়ার সুযোগ হয়নি।
এদিকে আমার সংসার, তাসফিয়া, চাকরি, লেখালেখি ও সাংগঠনিক ব্যস্ততা। সব মিলিয়ে সাদকে আর আলাদা করে সময় দেয়া হয়ে ওঠেনি। কিন্তু অদ্ভুতভাবে সেও মামার ভক্ত। পৃথিবীতে তার ঘরের লোকজনের পরে একমাত্র আমিই আপন এবং শুধুমাত্র আমাকেই কল দেয়া যায়। তাই সারাদিনে বেশ কয়েকবার ফোন দেবে আমাকে। মা-বাবাকে জ্বালাতন করবে আমাকে কল দেওয়ার জন্য। ব্যস্ত থাকি বলে এক সময় কল ধরি না। কিন্তু তার কল দেয়া বন্ধ নাই। বাবা-মা বোঝায় মামা ব্যস্ত আছে, পরে কল দিও। তখন যদি একটু সুস্থির হয়।
এদিকে তাসফিয়া সারা আপু বলতে অজ্ঞান। সারা কি বলে, কি করে, কি পরে, কি পড়ে। এসব নিয়ে তার যথেষ্ট আগ্রহ। সারা আপু আসলে তাকে নিয়ে কি কি করবে সব পরিকল্পনা করে রাখে। ওখানে গেলে কি করবে সেসব আলোচনা করে ঠিক করে রাখে। এটা সেটা বানিয়ে ছবি তুলে রাখে সারাকে দেখাবে বলে। আমাকে বলে ফেসবুকে ছবি পোস্ট দিতে যাতে সারা দেখতে পায়। আর ভিডিও কলে কথা বলা তো আছেই।
এই প্রজন্ম কোনদিন বুঝতেও পারবে না তার ছাড়া মোবাইল ফোন দেখে আমাদের কী অনুভূতি হয়েছিল। মোবাইল ফোনে ভিডিও কলে কথা বলা যাবে এই কথা জানতে পেরে আমরা কতটা অবাক হয়েছিলাম। এখন ওদের কাছে এটা নিতান্তই একটি সাধারণ ব্যাপার। প্রথম প্রথম আমরা মোবাইল ফোন ছুতে ভয় পেতাম, কত সাবধানে ব্যবহার করতাম। এখনকার প্রজম্ম রাত দিনের উল্লেখযোগ্য একটি সময় মোবাইল ফোন নিয়েই পড়ে থাকে।
সারার মত তাসফিয়াও একদিন বড় হয়ে যাবে। ধীরে ধীরে ওরা নিজের জন্য এক পৃথিবী সাজিয়ে নেবে। পড়াশুনা, বন্ধু-বান্ধবী জুটিয়ে নেবে। হয়তো একজন ভালোবাসার মানুষ খুঁজে নেবে। কর্মজীবন, সংসার নিয়ে বিশাল এক পৃথিবীর গুছিয়ে নেবে তারা।
সেই পৃথিবীতে একদিন আমরা থাকবো না, তা ভাবতেই অবাক লাগে। স্রষ্টার বিধান আমাদের অস্বীকার করার উপায় নেই। জীবন চলে জীবনের নিয়মে।
মাঝে মাঝে ঘুমন্ত কন্যার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকি। কন্যা যখন সজাগ থাকে জিজ্ঞেস করে আব্বু তুমি আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেন। আমি তখন জড়িয়ে ধরে চুমু দেই। সেও আমাকে পাল্টা চুমি দেয়। আমি বলি- 'আম্মু তুমি যখন বড় হবে তখন কি তুমি আমাকে ভুলে যাবে। আমাকে কি আর আদর করবে না।' তাসফিয়া তখন অবাক করা এক উত্তর দেয়। বলে "আমি যখন বড় হব তখন তুমি একটা ছোট ছেলে হয়ে যাবে" তখন আমি তো তোমার আম্মু হবো। আর তোমাকে কোলে নিয়ে সারাদিন আদর করবো। আমি বলি - তাই যেন হয় মা, আমি যেন সারাজীবন তোমার হাতের পুতুল হয়ে থাকতে পারি।
শুভ জন্মদিন তাসনিম সারা। ভালো থেকো আম্মু।
কাছে
থাকি
দূরে
থাকি
সবসময়
তোমার
জন্য
শুভকামনা রইল।
ইতি তোমার মামা
মনিরুল
ইসলাম
শ্রাবণ
ট্যাংকেরপাড়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
১৫ অক্টোবর ২০২২খ্রি.
0 মন্তব্যসমূহ